আমাদের গেরিলারা: পর্ব-০১

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০১৯, ০১:০৫

নিউমার্কেটের মোনিকো রেস্টুরেন্ট; এখানে 'ফওজি' অনুষ্ঠান হয় পাকসেনাদের আনন্দ দেবার জন্য। সময়টা ১৯৬৯ এর জানুয়ারীর প্রথম দিকের। আবার এখানেই আড্ডা দেয় ষাটের দশকের কিছু উঠতি তরুন যারা খুব রাজনীতি সচেতন। আড্ডা দেয় কিছু উঠতি কবি। মাঝে মাঝেই এখানে নির্মলেন্দু গুন, হেলাল হাফিজ, শাহ হেলালুর রহমান চিশতি, মহাদেব সাহা সহ কিছু তরুনেরা এসে চায়ের কাপে ঝড় তোলে। মুন্ডুপাত করে আইয়ুব খানের। মুজিবের ছয়দফা নিয়ে তর্ক হয় প্রতিনিয়ত। আওয়ামীপন্থী তরুনদের সাথে তর্ক হয় ন্যাপ ( ভাসানী) পন্থী তরুনদের। ধোঁয়া ওড়ে সিগারেটের, ধোঁয়া ওড়ে চায়ের কাপের!

ঢাকা শহর ছেয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশে কারণ ছয় দফার জয়জয়কার চারিদিকে। বত্রিশ নম্বরের আশেপাশে কেউ, তাজউদ্দিনের ঘরের কোনায় বাদাম বিক্রেতার ছদ্মবেশে পুলিশ, ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) গেটে ইদানিং নতুন কিছু ঝাড়ুদারের আগমন, মহসীন হলের মালি বদল হয়েছে গত ক'মাসে প্রায় তিনবার, জগন্নাথ হলের ডাইনিং বয় আবার অবাঙালী, তার চুলের কাট দেখে কারো বুঝতে বাকি থাকেনা সে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য।

ইকবাল হলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র খসরু আর ওর বন্ধু মোস্তফা মোহসীন মন্টু দুজনে খুব অস্থির হয়ে ওঠে কিছু একটা করা দরকার। গোয়েন্দা পুলিশ ওদের খুব পিছনে লেগেছে।

পরেরদিন রাতে ডাকা হয় মহসীন হলের বাবলা, নাজিম, বাচ্চু, মওলা, হুদা আর মিলনকে। খসরুর সকল কাজের সাথী মন্টু আর তার ভাই সেলিম জরুরী কাজে গ্রামের বাড়ী গেছে। মন্টুকে ছাড়াই মহসীন হলে ওদের সাথে গোপন মিটিং সেরে নেয় খসরু। রাতের আধাঁরে সবাই চলে যায় যারযার হলে।

পরেরদিন দুপুর! 'মোনিকো রেস্টুরেন্ট' নিউমার্কেট, ভেতরে চলছে 'ফওজি' অনুষ্ঠান। ভেতরে ঢুকে পড়ে কতগুলো তরুন ওদের মুখে গামছা পেঁচানো, হাতে ভেজালী। গতকাল রাতের প্লানিং অনুযায়ী রেস্টুরেন্টের প্রধান গেটে দাঁড়িয়ে থাকে চারজন আর জলসা ঘরে ঢুকে পড়ে বাকি তিনজন। কিছুক্ষন পর চিৎকার করে ওঠে জলসা ঘরের ভেতরের কেউ।

কতগুলো তরুন নিউমার্কেটের মেইন রাস্তা ধরে পালিয়ে যায় আজিমপুরের ওদিকে, নীলক্ষেতের রেলস্টেশনে এসে থামে আরেকটি ট্রেন। যুবকেরা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়!

পরেরদিন ইকবাল হলের কোন একরুমে খসরু বসে আছে প্রাক্তন এক ছাত্র নেতার সামনে। ছাত্রনেতার হাতে একটি পত্রিকা সেখানে পেছনের পাতার ডান কোনায় লেখা.....

''মোনিকো রেস্তোরায় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা খুন-দুর্বুত্তরা পালিয়ে গেছে''!

তথ্যসুত্র: আবু সাইদ মাসুদ বাবলা'র ('গেরিলা' খ্যাত অভিনেত্রী জয়া'র পিতা) দেয়া সাক্ষাতকারের উপর ভিত্তিকরে লেখা। সাক্ষাতকার নিয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত