‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০১৬, ১১:২৫ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬, ১৩:২৩

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পাঁচ নম্বর সড়কের গার্লস হাই স্কুলের পাশে তাজ মঞ্জিল নামে একটি বাসার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় ওই বাড়ির ভেতরে থাকা ৯ জন জঙ্গি সদস্যের সবাই নিহত হয়। বাড়িটির বেশিরভাগ ফ্ল্যাট মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এর আগে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে পুলিশের ওপর গুলি ও হ্যান্ড গ্রেনেট ছুড়ে মারে। এতে কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান জানান, সোমবার (২৪ জুলাই) মধ্যরাতের পর পুলিশ ও র‌্যাবের প্রাথমিক অভিযান শুরু হয়। পরে সোয়াট বাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’ নামে মূল অভিযান চলে ভোর ৫ টা ৫১ মিনিট থেকে ৬ টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত। এতে ৯ জঙ্গি মারা যায়।

তিনি আরো জানান, নিহত নয় জনের পরিচয় এখনও জানা যায় নি তবে ভবন থেকে জিহাদি বই, বোমা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে ঘটনাস্থল থেকে আহত হাসান নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে সকাল সাড়ে ৭ টায় ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক সহ পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা। এলাকাটি এখনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। যান চলাচল বন্ধসহ এলাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। হতাহতরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, “যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরনে কালো পাঞ্জাবি ছিল। ওই বাসা থেকে আরও বেশ কিছু নতুন কালো পাঞ্জাবি ও কালো পাতাকা উদ্ধার করা হয়েছে।”

মিরপুর থানার ওসি মাহবুব হোসেন জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে জঙ্গিবিরোধী ওই অভিযান শুরুর ঘণ্টা দেড়েক পর রাত ২টার দিকে শীর্ষ কর্মকর্তাদের ডেকে ওই সড়কে আরও পুলিশ মোতায়েন করতে বলা হয়। অভিযানের শুরুতে পুলিশ চারদিক থেকে ঘেরাও করে ওই ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পাঁচ তলার আস্তানা থেকে কয়েকজন জঙ্গি নেমে এসে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে। 

ওসি মাহবুব হোসেন জানান, পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির মধ্যে এক জঙ্গি আহত হয়। হাসান নামে ২৪ বছর বয়সী ওই তরুণকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেলের নিবন্ধন খাতায় হাসানের বাবার নাম লেখা হয়েছে রেজাউল করিম। বাড়ি বগুড়ার জীবন নগরে। তার পায়ে গুলি, মাথায় জখমের চিহ্ন থাকার কথা নিবন্ধন খাতায় লেখা রয়েছে।

ওই ভবনের ছয় তলার বাসিন্দা আল্লামা ইকবাল অনিক জানান, ভবনের প্রতিটি তলায় চারটি করে ফ্ল্যাট। বেশিরভাগ ফ্ল্যাট ‘ব্যাচেলরদের’ ভাড়া দেওয়া, বাড়িওয়ালা থাকেন দোতলায়। নিহতদের মধ্যে সাতজনের লাশ পাওয়া গেছে কোরিডোরে, দুজনের লাশ ছিল দুটি কক্ষে।  

অতিরিক্ত উপ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, সোয়াটের অভিযান শেষে ওই ফ্ল্যাটে বিস্ফোরক আছে কি না তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। পরে ক্রাইম সিন ইউনিট তাদের কাজ করবেন।

সকাল ১০টার দিকে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরে সাংবাদিকদের বলেন, ওই জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তল্লাশি শেষ করার আগে সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

পরে ঢাকা মহানগনর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।