হিমাগারগুলোতে আলুর অভাব না থাকলেও বাজারে দাম বেশি
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:৪১

রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে। তবে বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। স্থানীয় বাজারগুলোতে মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বেশি দরে বিক্রি করছে বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে আরও জানা গেছে, বেশি দামের আশায় হিমাগার থেকে চাহিদামতো আলু বাজারে ছাড়ছে না ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ফলে আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা রাজশাহীতে খুচরা বাজারে ক্রেতাদের আলু কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। হিমাগার ফটক থেকে আড়ত ও পাইকারের মোকাম ঘুরে খুচরা বাজারে পৌঁছতেই কেজিতে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে আলুর দাম।
আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে হিমাগার ছাড়াও পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গত বুধবার রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া বাজারের দুটি আড়ত ও দুটি হিমাগারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পৃথক টিম।
এ সময় হিমাগারের আলু ছাড়ের মূল্য চালানি রসিদ না থাকায় বায়া বাজারের আড়তদার মুকুল হোসেনকে ৫ হাজার টাকা ও হযরত আলীকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হিমাগার মালিকদের দ্রুত সময়ে বাজারে আলু ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, প্রথমে আমরা খুচরা আলু বিক্রেতাদের কাছে ক্রয় রসিদ দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারেনি। পরে আমরা আড়তে গিয়ে আলু ছাড়ের রশিদ দেখতে চাইলে তারাও দেখাতে পারেনি।
আড়তদাররা ভোক্তা অধিকার টীমকে জানান, হিমাগার থেকে তাদের আলু ছাড়ের রশিদ দেয়া হয় না। জাতীয় ভোক্তা কর্মকর্তা আরও বলেন, নওহাটার ‘হিমালয়’ কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ ক্ষমতা ১ লাখ ১০ হাজার বস্তা। ইতোমধ্যে তারা ৬০ হাজার বস্তা আলু ছেড়েছে। বাকি ৫০ হাজার বস্তা মজুত রয়েছে।
অন্যদিকে, রহমান কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩ লাখ বস্তা। তারা ১ লাখ ৭৯ হাজার বস্তা আলু ছেড়েছে। এই কোল্ড স্টোরেজে এখনো ১ লাখ ৩১ হাজার বস্তা আলু মজুত আছে।
তিনি বলেন, হিমাগার মালিকরা জানিয়েছেন, আলু হিমাগারে থাকলেও এর মালিক বিভিন্ন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যারা লাভের আশায় আলু কিনে মজুত করে রেখেছে। আমরা তাদের তালিকা চেয়েছি।
ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা জানান, দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা রাজশাহী। এক মৌসুমে শুধু রাজশাহীতেই ১৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৬টি হিমাগারের সংরক্ষণ ক্ষমতা ৮০ লাখ বস্তা, যার পরিমাণ ৮ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে ৪ লাখ টনের বেশি আলু মজুত আছে। যদিও এর একটা অংশ বীজ আলু হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে যা আবাদ মৌসুমে হিমাগার থেকে ছাড়া হবে। হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ মজুত থাকতে স্থানীয় বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন তারা।
উল্লেখ্য, গত আলু সংগ্রহ মৌসুমে বড় বড় কয়েকটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মাঠ থেকে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিদরে আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করে। হিমাগারে ৫৫ কেজি থেকে ৬০ কেজির এক বস্তা আলু সংরক্ষণে এক মৌসুমের ভাড়া লাগে ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা। সেই হিসাবে এক কেজি আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া লাগে ২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে শতকরা ১০ ভাগ মুনাফা যোগ ও পরিবহণ ভাড়াসহ হাতবদল হয়েও আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার বেশি হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু আলুর কেজি ৫০ টাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মনে করেন ক্রেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হিমাগার মালিক বলেন, হিমাগার থেকে বর্তমানে অল্প অল্প করে আলু বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বাজারে আলুর দামের খোঁজখবর রাখছেন। অনেকেই আলু উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন্ন জেলায় চালান করছেন।
রাজশাহী জেলার মোহনপুরের আলুচাষি মোরশালিন বলেন, হিমাগার থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আলু ছাড়ছে না আরও বেশি দামের আশায়। একইভাবে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও আলু কিনে আড়তে মজুত রাখছেন। এতে করে ভোক্তার ওপর দামের বোঝা দিন দিন বাড়ছে।