ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:৪৮
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবহমান গ্রাম বাংলার নদ-নদীতে এতিহ্যবাহী খেলা নৌকা বাইচ। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ছোট-বড় বাইচের নৌকা ও মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দ আর ছন্দ মাতিয়ে তোলে তিতাসের দুই তীর। নৌকা বাইচ উপভোগ করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি থেকে মেড্ডা পর্যন্ত তিতাস নদীর তীরে জনস্রোতে পরিনত হয়। নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতীসহ নানা বয়সের মানুষেরা তিতাস নদীর দুই পাড়ে কানায় কানায় ভরে যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর প্রাণভরা উচ্ছ্বাসে উৎসব মুখর পরিবেশে জেলা শহরের তিতাস নদী (শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম পয়েন্ট হতে মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পয়েন্ট পর্যন্ত) এই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং দারাজ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস্ কোম্পানী লিমিটেড ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস লিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহযোগিতায় ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে এই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত ২০২০ ও ২০২১ সালে এই দুই বছর করোনা ভাইরাস প্রভাবের কারনে নৌকা বাইচ অনুষ্টিত হয়নি। করোনার পর ২০২২ সালে আবার নৌকা বাইচ অনুষ্টিত হয়। বৃহস্পতিবার আবার এই নৌকা বাইচ অনুষ্টিত হল।
এদিকে, নৌকা বাইচ উপলক্ষে তিতাসের দুই পাড় উৎসবে পরিণত হয়েছে। নৌকা বাইচ উপভোগ করতে দুপুর থেকেই জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশ থেকে হাজার-হাজার মানুষ তিতাসের দুই পাড়ে, বিভিন্ন ভবনের ছাদের উপর ভিড় জমায়। অনেকেই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে ছোট ছোট নৌকা ভাড়া করে পরিবার পরিজন নিয়ে তিতাস নদীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। তিতাসের দুই পাড়ে আনন্দের বন্যা বইছে।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা জেলা শহরের জামাল উদ্দিন বলেন, খুব ভালো লাগছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। এটা আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাণের উৎসব। এই উৎসবে এসে খুব লেগেছে।
নৌকা বাইচে অংশ নেয়া জেলার বিজয়নগরে উপজেলার নৌকার মাঝি মো. জসিম উদ্দিন, বিল্লাল মিয়া বলেন, প্রতি বছরই আমরা নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করে থাকি। এবারও অংশগ্রহণ করে খুব ভালো লাগছে। খুব ভালো আয়োজন, আমরা খুশি। প্রতি বছর এই আয়োজন অব্যাহত থাকে এই কামনা করা।
আয়োজকরা জানান, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ১৫টি নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ৫ টি নৌকা, সরাইল উপজেলার ১টি নৌকা, আশুগঞ্জ উপজেলার ২টি নৌকা (হবিগঞ্জ থেকে ভাড়া), নবীনগর থেকে ২টি নৌকা (হবিগঞ্জ থেকে ভাড়া), নাসিরনগর উপজেলার ১ টি নৌকা (হবিগঞ্জ থেকে ভাড়া) ও সদর উপজেলার ৪ টি নৌকা (হবিগঞ্জ থেকে ভাড়া)।
নৌকা বাইচ চলার সময় তিতাস নদী (শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম পয়েন্ট হতে মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পয়েন্ট পর্যন্ত) এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও নৌ-পুলিশের কয়েকটি টীম নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও ছিল ডুবুরী দল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টীম। পাশাপাশি নৌকা বাইচ সুশৃখলের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৮টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়ির ডিসি মো. শাহগীর আলম বলেন, করোনার কারন গত দুই বছর ২০২০ ও ২০২১ নৌকা বাইচ বন্ধ ছিলো। করোনার পর ২০২২ সালে আবার নৌকা বাইচ অনুষ্টিত হয়। গতবার থেকে এবার নৌকা বাইচ আরো বেশি সৌন্দর্য ও চাকচম্য বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আগামীতেও এই নৌকা বাইচ অব্যাহত থাকবে।
র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, যত দিন বাঙ্গালি ও বাংলা সংস্কৃতি থাকবে তত দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই নৌকা বাইচ অনুষ্টিত হবে। তিতাসের পাড় আজ হাজার হাজার মানুষ। এতেই বুঝা যায় মানুষ নৌকা বাইচ কত ভালোবাসে। তীব্র প্রতিযোগিতা মূলক নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্টিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
এরপর বিকেল ৫ টার দিকে তিতাস নদীর পাড় মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পয়েন্টে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় বিজয়দের মধ্য পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
ডিসি মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্টানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এসপি মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর সভার চেয়ারম্যান নায়ার কবির, সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ প্রমুখ।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া নবীনগর উপজেলা (হবিগঞ্জের লামা পাইল যুব সংঘের নৌকা) ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় হওয়া সরাইল উপজেলা (শাহবাজপুরের বাবুল মোল্লার নৌকা) ৫০ হাজার ও তৃতীয় হওয়া সদর উপজেলা (হবিগঞ্জের শাহাজালালের তরী) ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। এছাড়া নৌকা বাইচে অংশ নেয়া ১৫ টি নৌকাকেই ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।