বাড়িতে শাপলা-পদ্ম ফুল চাষ করে আয় ৫০ হাজার টাকা

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ১৩:১১

আসিফ ইকবাল, মেহেরপুর

মেহেরপুরে সৌখিন খামারী সাইফুজ্জামান রিজন লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজ বাড়িতে পদ্মফুল চাষ করে মাসে আয় করছেন ৫০ হাজার টাকা। বিভিন্ন রঙয়ের ৫০ রকমের শাপলা আর ৪০ রকমের পদ্মফুলের সংগ্রহশালা দিয়েছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার ষোলমারি গ্রামের ওই যুবক। বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ে সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। এক সময় দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে দেখা মিলতো হরেক রকম শাপলা আর পদ্ম ফুলের। সময়ের পরিবর্তনে এখন যেন জাতীয় ফুল শাপলার দেখা মেলা দায়। তবে রিজন নিজ বাড়িতে লাল, সাদা, হলুদ, বেগুনী, গোলাপি এমন বিভিন্ন রঙের শাপলা ও পদ্মার সংগ্রহশালা করেছেন।

মেহেরপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ষোলমারি গ্রাম। স্কুলশিক্ষক আবুল হাশেমের ছেলে সাইফুজ্জামান রিজন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে কিছুদিন আগে মাস্টার্স শেষ করেছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজ বাড়িতে ফুলের চাষ করছেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই  প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন জলজ ফুলের প্রতি আসক্তি তার। তখন থেকে নেশা ভিন্ন কিছু করার। কয়েক বছর আগে শখের বসে বদ্ধ জলাশয় ও খাল বিল থেকে কয়েক জাতের শাপলা ও পদ্ম ফুল নিয়ে বাড়ির ছাদে সংরক্ষণ শুরু করেন। বাড়ির ছাদে শাপলা ও পদ্মফুল ফুটে উঠলে সৌন্দর্য বর্ধন হয়। তখন থেকেই নেশা ধরে বিলুপ্ত প্রজাতির শাপলা ও পদ্ম ফুলের চারা সংগ্রহের। এ পর্যন্ত ৯০ প্রজাতির শাপলা ও পদ্মফুলের টব সাজিয়েছেন। পানিতে মশক নিধনের জন্য একই সঙ্গে টবে চাষ করছেন মার্কারি বাহারি প্রজাতির সৌখিন মাছ।

সাইফুজ্জামান রিজন জানান, শুরুটা ছিল শখের বসে মাত্র ২৫০ টাকা দিয়ে। একটি দুটি করে বিভিন্ন রঙের শাপলা সংগ্রহ করতে থাকি। এখন আমার সংগ্রহশালায় যোগ হয়েছে পদ্মের সমাহার। বাড়ির উঠানে শাপলা আর ছাদে পদ্মের বাগান চোখ জুড়িয়ে দেবে যে কোনো ব্যক্তির। প্রতিটি ফুলের রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। দেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আনা এই ফুলগুলো ইতিমধ্যে বানিজ্যিকভাবে বিক্রয় শুরু হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি শাপলা আর পদ্মের চারা বিক্রি করে বর্তমানে আয় হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। জলজ এসব ফুল গাছের চাহিদাও রয়েছে বেশ। নতুন বিভিন্ন রঙয়ের শাপলা আর পদ্মের উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিজের সংগ্রহশালার পরিধি আরো বাড়াবেন বলে জানালেন তিনি।

রিজনের বোন সাখিয়া তাসনিম জানান, নিজ বাড়িতে সংগ্রহশালা করায় আলাদা কোনো সময় দিতে হয় না রিজনকে। অবসর সময়ে হালকা পরিচর্যা করলেই হয়। বিকালে অবসর সময়ে ফুলের পরিচর্যা করতে আমার ভালোলাগে। ফুলগুলো যখন ফোটে তখন খুবই ভালোলাগে। শাপলা আর পদ্মের এই সমারোহ দেখতে অনেকেই ভীড় জমাচ্ছেন আমাদের বাড়িতে।

মেহেরপুর গাংনী ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক এনামুল আজীম দৈনিক সাহসকে জানান, এক সময় দেশের জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন রকমের শাপলা আর পদ্মের দেখা মিলতো। বর্তমান প্রজন্ম বিভিন্ন রঙয়ের সে সব ফুল দেখেনি। ছাদবাগানে এমন জলজ উদ্ভিদের সংগ্রহ আবারো শাপলা আর পদ্ম ফুলকে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবে।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন দৈনিক সাহসকে বলেন, সাইফুজ্জামান রিজন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোক্তার কাছ থেকে অনেক কিছুই জানার আছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তার ছাদ বাগানে কয়েকবার গিয়েছি। আমাদের পরামর্শ, সহায্য ও সহযোগীতা তার জন্য অব্যাহত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত