আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ১১:৩২

সাহস ডেস্ক
পরিবেশ রক্ষায় ইকোসিস্টেম সুস্থ রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

পরিবেশ-প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।বিশ্বজুড়ে এখন পরিবেশদূষণের মাত্রা ভয়াবহ। প্রতিনিয়ত এ পরিবেশকে আমরা  নানাভাবে দূষিত করে আসছি। বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি প্রাণ-প্রকৃতিকে।

৫ জুন  আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে।

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত মান উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার লক্ষ্যে পালন করা হয় দিবসটি। প্রতি বছরই এ দিবসটি আলাদা প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়ে আসছে।

এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংগঠনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‌'প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে।' এবারের পরিবেশ দিবসের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে 'সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ।'

প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যেসব পণ্য ব্যবহার করি, তার বেশির ভাগ সামগ্রীই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়।

প্লাস্টিক সাধারণভাবে নমনীয়, যা সহজে বাঁকা করা যায়, ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও কম দামি। এই সহজলভ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করে আমরা আমাদের পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছি।

গত ৫০ বছরে পুরো বিশ্বে মাথাপিছু ১ টনের বেশি প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। যার ৯০ শতাংশের বেশি পৃথিবীর পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। 

এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং তা মাইক্রো, ন্যানো প্লাস্টিকের কণাসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যে ভয়ংকর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

পরিবেশদূষণের উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অত্যাধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বনভূমি উজাড়, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন, সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, ওজোন স্তরের ক্ষয়, অ্যাসিড বৃষ্টি, অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, দারিদ্র্য, প্রসাধনসামগ্রী, প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি। 

৫ জুন আজ সকাল সাড়ে ৯ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন। 

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২২, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২২, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১ এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের  মধ্যে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। 

শেরেবাংলা নগরে পরিবেশ মেলা চলবে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত। ২৭ থেকে ৩০ জুন ঈদ উল আযহার সরকারি ছুটি থাকায় বৃক্ষমেলা চলবে ৫ থেকে ২৬ জুন এবং ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত।

প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে বিশ্বব্যাপী। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ জুন থেকে ১৬ জুন, জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন (United Nations Conference on the Human Environment) অনুষ্ঠিত হয়। 

সম্মেলনটি ইতিহাসের ‘প্রথম পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’-এর স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।

পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজন সচেতনতা। সচেতনতার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারি। এর ফলে বাঁচবে পৃথিবী, বাঁচবে মানবজাতি। এজন্য প্রয়োজন পরিবেশবান্ধব চিন্তা-চেতনা।

১. ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপলায়েন্সের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি বাঁচানো সম্ভব। এছাড়া, পরিবেশবান্ধবের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সোলার পাওয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।

২. কাঠের উনুনের ব্যবহার যতোটা সম্ভব কমানো উচিত। কারণ কাঠের উনুন থেকে অত্যধিক পরিমাণে ধোঁয়া নির্গত হয়। যা বায়ুর সঙ্গে মিশে গিয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

৩. পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ওপর জোর দিত হবে। গাড়ির নির্গত ধোঁয়া বায়ুর সঙ্গে মিশে দূষণ ঘটাতে পারে। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহার রা জরুরি।

৪. ইকোসিস্টেমকে সুস্থ রাখতে হবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও বায়ুদূষণের কারণে ইকোসিস্টেম প্রভাবিত হচ্ছে। প্রভাব পড়ছে গাছপালা, পশুপাখির ওপর। তাই ইকোসিস্টেম সুস্থ রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

৫. কীটনাশক ও কেমিক্যালের ব্যবহার কম করতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।

৬. কার্বন ফুটপ্রিন্ট ও বায়ুদূষণ যাতে কম হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়ার কারণে বাড়তে থাকে বায়ুদূষণ। এছাড়া, এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহারও কম করা উচিত।

৭. বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেল করতে হবে। কাঁচ, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম বা খবরের কাগজ ফেলে দেয়ার পরিবর্তে রিসাইকেল করা প্রয়োজন। এর ফলে আবর্জনা জমে দূষণ ছড়াবে না। এমনকি এই বর্জ্যগুলো পোড়ানোর ফলে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশের ক্ষতি করতে পারবে না। তাই প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতল, এমনকি খবরের কাগজ না ফেলে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।

৮. নিজ এলাকায় ফল-সবজি উৎপাদন করা যেতে পারে। এর ফলে ফল-সবজি সরবরাহের জন্য যে গাড়ি চলাচল করা হয়, তা কমানো যাবে। পাশাপাশি ফল ও সবজি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণের জন্য কীটনাশক ও প্রিজারভেটিভের ব্যবহারও কম করা যাবে। এই প্রিজারভেটিভগুলো সরাসরি বায়ুদূষণ ঘটায়। অর্গ্যানিক খাদ্যবস্তুর ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। নিজের বাগানে এগুলো উৎপাদন করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

৯. বাড়িতে দূষিত ও টক্সিক জিনিসের ব্যবহার না করাই ভালো। বাড়ি থেকেই একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। প্লাস্টিক টুথ ব্রাশ, ক্যান, বোতলের পরিবর্তে কাঠের জার ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার মশা বা আরশোলা মারার জন্য কেমিক্যালযুক্ত স্প্রে ব্যবহারের পরিবর্তে কিছু প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ে তৈরি সামগ্রী দিয়ে পোকামাকড় তাড়ানো সম্ভব।

১০. নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে। বায়ু বা জল দূষণের কারণে পরিবেশকে দূষিত করে তোলার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত