কবির বিন আনোয়ার: অনুপ্রেরণার উৎস

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:২১

সাহস ডেস্ক

জনপ্রশাসনের শীর্ষ পদে থাকা প্রভাবশালী ও আলোচিত সাবেক আমলা, নদীপুত্র খ্যাত কবির বিন আনোয়ার সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করলেও সকল প্রলোভনকে পায়ে মাড়িয়ে নিজেকে রেখেছেন নিষ্কলুষ। যার ফল হিসেবে কর্মজীবনে দক্ষতা ও সততার জন্য তাঁর অবসরের পর ধন্যবাদ প্রস্তাব এনেছে মন্ত্রীসভা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ  ধারণ করা সম্ভ্রান্ত আওয়ামী পরিবারের সন্তান কবির বিন আনোয়ার চাকরিজীবন শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণের মাধ্যমে ছাত্রজীবনের মত আবারো ফিরেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। রাজনীতিতে নতুনরুপে আবির্ভুত হয়ে নিজ জেলা সিরাজগঞ্জ সফরেই সিক্ত হয়েছেন জনমানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায়।

তাঁর পিতা আনোয়ার হোসেন (রতু) একাধারে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতিসেবী। মাতা সৈয়দা ইসাবেলা ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শিক্ষক। ১৯৬৪ সালে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কবির বিন আনোয়ার। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক আবহে বেড়ে ওঠা কবির বিন আনোয়ারের স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে। সেখানেই শিক্ষকদের নির্বাচনে কলেজ ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে হাতেখড়ি ঘটে তাঁর নেতৃত্ব জীবনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় অংশ নেন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৮ সাল অবধি।

শিক্ষাজীবন শেষে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন কবির বিন আনোয়ার। মাঠ প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সচিবালয়ে সিনিয়র সহকারি সচিব হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও উপসচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অতিরিক্ত সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের বাতিঘর হিসেবে দেশব্যাপি ছড়িয়ে থাকা ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌছে দিতে এটুআই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবেও এই সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন কবির বিন আনোয়ার।

২০১৮ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগদান করেন তিনি। দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ ভারত যৌথ নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং অভিন্ন নদ-নদী বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। এ সময়ে তাঁর উদ্যোগে প্রায় ১৪ বছর পর নেপাল ও প্রায় ১২ বছর পর ভারতের সাথে যৌথ নদীবিষয়ক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ভারত দুই দেশের মধ্যে কুশিয়ারা নদীতে ১৫৩ কিউসেক পানিবন্টন চুক্তি সই হয়।

২০২২ সালের ১১’ই ডিসেম্বর জনপ্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রীপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি কবির বিন আনোয়ার। তিন সপ্তাহ দায়িত্ব পালন শেষে সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ি ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় এ বছরের ৩ জানুয়ারি অবসরোত্তর ছুটিতে যান দেশের ২৩তম মন্ত্রীপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার।

সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নানা দায়িত্ব পালনের পরও মানুষ, প্রকৃতি ও বন্যপ্রানীর প্রতি ভালোবাসার কারণে কবির বিন নিজ মায়ের নামে গড়ে তুলেছেন ইসাবেলা ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রকৃতি গবেষণা ও সামাজিক কল্যানমূলক সংগঠন। তাঁর সংগঠন ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশব্যাপি লাগানো হচ্ছে অসংখ্য গাছ। একই সাথে নতুন প্রজন্মের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে বছরব্যাপী বিতরণ করা হচ্ছে গাছের চারা। এছাড়া সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে মায়ের নামে গড়ে তুলেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইসাবেলা বিদ্যা নিকেতন ও ইসাবেলা-আনোয়ার শিশু নিকেতন। যেখানে অসংখ্য শিশু পাচ্ছে বিনামুল্যে বই, খাবার ও শিক্ষার সুযোগ।

করোনা ভাইরাস মহামারী রুপ ধারণ করলে সবাই যখন নিজের ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘরবন্দি হয়ে পরেছিলেন, তখন কবির বিন আনোয়ার করোনা মহামারী মোকাবেলায় সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছুটে গিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। ব্যাক্তিগতভাবে ও ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করেছেন আর্তমানবতার সেবায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম আদর্শ ছড়িয়ে দিতে কবির বিন আনোয়ার হাতে কলম তুলে নিয়েছেন। লিখেছেন শোষিতের বঙ্গবন্ধু, প্রণতি বঙ্গমাতা, বিশ্বগণমাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ আরো অসংখ্য বই।

তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। আইটিইউ থেকে ২০১৪, ১৫, ১৭ ও ১৮ সালে বেসিস পুরস্কার গ্রহণ করেছেন কবির বিন আনোয়ার। এছাড়া ২০১৬ ও ১৮ সালে তিনি লাভ করেন জনপ্রশাসন পদক। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ পদক এবং ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকে ভুষিত হন জনপ্রশাসনের চৌকষ এই কর্মকর্তা। তাছাড়াও সমাজকল্যানের স্বীকৃতিস্বরুপ অতীশ দিপঙ্কর শান্তি পদক লাভ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সফরসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ১৭টিরও বেশি দেশ সফরের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছেন কবির বিন আনোয়ার।

চাকরিজীবন শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান পদে কবির বিন আনোয়ারকে ফিরিয়ে এনেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ জানুয়ারি থেকে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমামের কক্ষে বসতে শুরু করেছেন তিনি। এইচ টি ইমামের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা ছিল পদটি। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসার প্রথম দিনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এরপর দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী নির্বাচন পরিচালনা ভবনে তাকে অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ খান বলেন, সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান কবির বিন আনোয়ারের অতি সাধারণ জীবনযাপন ও জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রানিত করে। তাঁর জীবনধারা পাঠ করলে আমরা আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিবেদিত করার প্রেরণা খুঁজে পাই।

সলপ ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জি শওকাত ওসমান বলেন, একজন কবির বিন আনোয়ার নিজের ব্যাক্তিত্বে ও কর্মস্পৃহায় নিজেকে সকলের অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত করেছেন। তাঁর জীবনধারা শিক্ষা দেয় কিভাবে ক্ষমতাকে মানবকল্যানে ব্যবহৃত করে মানবপ্রেমিক হওয়া যায়। ক্ষমতার শিখড়ে আরোহণ করেও ক্ষমতার প্রয়োগে বিলাসী জীবন বেছে না নেওয়া একজন কৃতিমানব তিনি।

উল্লাপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান পান্না বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান পদটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সন্মানের। যমুনা পাড়ের উজ্জল নক্ষত্র প্রয়াত এইচ টি ইমাম স্যারের পর সিরাজগঞ্জের আরেক কৃতি সন্তান কবির বিন আনোয়ার সেই পদকে অলংকৃত করেছেন, এটি আমাদের জন্য গর্বের। কবির বিন আনোয়ারের মত একজন নির্লোভ, নিরহংকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকই পারবে বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে এই পদের গুরুদায়িত্ব বাস্তবায়ন করতে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত