বাড়ি বাড়ি ঘুরে খেজুর রস সংগ্রহ করেন সুরুজ

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৪১

নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ

ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে ঘর থেকে সাইকেল নিয়ে বের হন সুরুজ মিয়া। সাইকেলে চষে বেড়ান আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ থেকে রস নামানো সুরুজের কাজ। আবার বিকাল হলে গাছ পরিষ্কার করে ঘটি (রস জমানোর পাত্র) বেঁধে দেন গাছে। রসের ভাগ একদিন পায় গাছের মালিক আরেকদিন সুরুজ মিয়া। এভাবেই চলছে সুরুজ মিয়ার শীতের সকাল এবং বিকালের কর্মযজ্ঞ। এমন দৃশ্য সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের। যা পুরো জেলায় একেবারেই বিরল।

সুরুজ মিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের নারায়ণতলা লম্বাহাটিতে। নিজের কোন খেজুর গাছ নেই। তাই ইউনিয়নের নারায়ণতলা, ভৈরবহাটি, ইসলামপুরসহ কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১৫-২০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তিনি।

জানা যায়, আবহাওয়া খেজুর গাছের উপযোগী না হওয়ায় জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে কোন খেজুর বাগান নেই। তাই গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিক্রি করেন সুরুজ মিয়া। একেকটি গাছ থেকে দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার রস সংগ্রহ করা যায়। শীত যত বেশি পড়ে রসও তত বেশি পাওয়া যায়। গড়ে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকার রস বিক্রি করতে পারেন সুরুজ। ভোরবেলা গাছ থেকে তাজা খেজুরের রস নামানোর এই দৃশ্য দেখতে ও রস পান করতে দূর দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসেন অনেকেই।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বড়পাড়া থেকে রস পান করতে আসা তরুণ মাজহারুল ইসলাম বলেন, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সুনামগঞ্জে খেজুরের রস পাওয়ার কথা শুনেছি, ফেসবুকেও দেখেছি। তাই খেজুরের রস খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে এসেছি।

একই এলাকার আবুল হাসান বলেন, খেজুরের রস খেতে অনেক ভোরে এসেছি। সকালের মনোরম দৃশ্যটাও উপভোগ করেছি। গাছ থেকে খেজুরের রস নামানো দেখেছি। টাটকা খেজুরের রস খেয়ে অনেক মজা পেয়েছি। যারা খেজুরের রস খেতে আসতে চান তাদের অনেক ভোরে আসতে হবে।

সুরুজ মিয়া বলেন, ফজরের আজানের পর পর আমি খেজুর গাছ থেকে রস নামাই। রসের অর্ধেক নেই আমি অর্ধেক নেয় গেরস্ত। আবার বিকালে গাছে ঘটি বেঁধে দিয়ে আসি। অনেকে আমার কাছ থেকে খেজুরের রস কিনতে আসেন। প্রতিদিন রস বিক্রি করে হাজার বারশো টাকা পাই। যে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করে অথবা নারায়ণতলা ভোরে এসে রস খেতে পারবেন।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, সুনামগঞ্জে মাঝে মধ্যে একটি দুটি খেজুর গাছ দেখা যায়। বাণিজ্যিক ভাবে কোনো গাছ লাগানো হয় না। তাই খেজুরের রস পাওয়াটা বিরল দৃশ্য। বর্ষার সময়ে এই এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী না থাকায় এখানে খেজুর চাষ করে উৎপাদনের সম্ভাবনা কম। তবে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে রস সংগ্রহ করাটা ইতিবাচক দিক। এতে গাছেই রস নষ্ট না হয়ে মানুষ খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। খেজুরের রসে প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত