রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রামেক-রাবির পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২২, ১৩:৩৭

সাহস ডেস্ক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের ছাদ থেকে পড়ে শাহরিয়ার হাসান নামের এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর করেছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় রামেক হাসপাতালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার অনুসন্ধানে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, মৃত শাহরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। শাহরিয়ারের গ্রামের বাড়ী দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। বুধবার রাত ৮টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের তিন তলায় ফোনে কথা বলছিল। সে সময় সানবাঁধানো টিউবওয়েলের পাশে ড্রেনে পরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। মাথা ফেটে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় পরবর্তীতে তাকে রামেকে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আসতে দেরি করায় আইসিইউ সেবা না পেয়ে মারা যান শাহরিয়ার এমন অভিযোগ আনে রাবি শিক্ষার্থীরা। এর জেরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মুখোমুখি অবস্থান নেয় মেডিকেল কলেজ ও রাবি শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামেক হাসপাতালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটা। এতে এক জনের মাথা ফাটাসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। তিনি বলেন, এখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র‍্যাবের বিভিন্ন ইউনিট এখানে উপস্থিত আছেন।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, রাত ৮টার দিকে আহত অবস্থায় তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার সহপাঠীদের অভিযোগ ওই শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ঠিকমতো হয়নি। এরই প্রতিবাদে তারা হাসপাতালে ভাঙচুর করেছে।

মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলার জেরে বহিষ্কারের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করা হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হয়। বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ প্রশাসন যৌথভাবে আলোচনায় বসে এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

পাঁচ সদস্য তদন্ত কমিটি সদস্যরা হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পুলিশ কমিশনার ক্রাইম, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. নওশাদ আলি ও মেডিকেল কলেজের একজন সিনিয়র ডাক্তার।

তদন্ত কমিটি গঠনের পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদেরকে আশ্বস্ত করতে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি ও ব্যবসা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজের সিসি ক্যামেরা ও ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে রিপোর্ট পেশ করা হবে। এসময় শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার আবুল কালাম সিদ্দিক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা আমাদের তিনদিন সময় দিয়ে সাহায্য করবে। আমরা তিনদিনের সময় চাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের ন্যায় বিচার পাবে বলে আশ্বস্ত করেন এ পুলিশ কমিশনার। যারা আহত তাদের চিকিৎসার সকল দায়িত্ব রামেক প্রশাসন নিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত