তাহিরপুরে প্রতিবন্ধী ও অটিজম স্কুল প্রতিষ্ঠায় অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২২, ১৭:০২

সাহস ডেস্ক

তাহিরপুর উপজেলা প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী শশী। বয়স নয় বছর। প্রতিদিনই বই হাতে নিয়ে উপজেলার বড়দল গ্রাম থেকে স্কুলের দিকে রওনা দেয় এই শিশু। পরিবারের অন্যরা ফিরিয়ে আনতে গেলে কান্নাকাটি করে, এই কান্না সারাদিনই চলে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় স্কুলটি বন্ধ থাকায় স্কুলে যাওয়া হচ্ছেনা শশীর।

শশীর বড় বোন ছায়মা আক্তার ছোট ভাইয়ের স্কুলে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে বলেন, স্কুলে কোন আর্থিক অনিয়ম হয়ে থাকলে, কিংবা স্কুল শুরু হবার বেলায় নিয়মনীতি না মানলে সেটি সংশোধন করবেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকবে কেন?  প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের স্কুল যাওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।

জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলা প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়টি শুরুই হয়েছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে। ২০১৯ সালের বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী যত্রতত্র প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন না করতে নিষেধ করা হয়েছে। নীতিমালায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রতিষ্ঠার পর বিদ্যালয় পরিচালনায় জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে ১৩ সদস্যের পরিচালনা কমিটি করতে হবে। এখানে এই দুটির কোনটাই করা হয়নি।

২০২১ সালের ২০ অক্টোবর তাহিরপুর উপজেলা সদরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি গৃহ নির্মাণ করে এই স্কুলের উদ্ধোধন করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিও করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল নূরের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক রিক্তা বেগম গত ১৮ জুন ২০ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন। ২১ জুলাই থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিক্তা বেগম সূচনাকালেই বিদ্যালয়টি নীতিমালা মোতাবেক প্রতিষ্ঠা হয়নি স্বীকার করে বলেন, আমাদের কিছুই করার ছিল না। সভাপতি আবুল নূর শুরু থেকেই আমাদেরকে কোথাও যোগাযোগ করতে দেননি। ২০ জন শিক্ষকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে নিয়েছেন সভাপতি, এই টাকার কোন হিসাব নেই। এখন আরও ৫০ হাজার টাকা করে দেবার জন্য বলায় আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। বিদ্যালয় বন্ধ রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শেণি মিলিয়ে ১৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের সভাপতি আবুল নূর বলেন, স্কুল করার সময় ২০১৮ এবং ২০১৯ এর নীতিমালা দেখেই করা হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের আনিত অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক নিজেই অযোগ্য। অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান-উদ-দৌলা বলেন, অভিযোগ তদন্ত করেছি, আগামী সপ্তাহে রিপোর্ট দেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠায় তিনি কিংবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কারও সঙ্গেই অফিসিয়ালি কোন যোগাযোগ করা হয়নি। স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সভাপতি শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন স্বীকার করেছেন। শিক্ষকেরা বলছেন, এক লাখ করে টাকা নেওয়া হয়েছে। এই টাকার কোন হিসাব নেই। এজন্য তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দেবার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত যেহেতু শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে চায়, বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। তবে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার আগে পর্যন্ত কেউ কারও সঙ্গে কোন আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন না।

জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. তানজিল হক এবং জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুচিত্রা রায় জানান, তাহিরপুরে প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠায় কেউ তাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেননি। তারা এই বিষয়ে কিছুই জানে না।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত