জামালপুর সদরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বেহাল দশা

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২২, ১৬:১১

মশিউর রহমান, জামালপুর

একতলা জীর্ণশীর্ণ বিল্ডিংয়ের ভিতর ঢুকে দেখা যায়, মেঝে ভেজা, ছাদ থেকে টিপটিপ করে পানির ফোঁটা পড়ছে। উপর দিকে তাকালে দেখা যায়, ছাদের প্লাস্টার উঠে গেছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়েছিল, সেই পানিই পড়ছে। রোগীরা এদিক-সেদিক দাড়িয়ে আছে। পাশের রুমে উপসহকারী মেডিকেল অফিসার চিকিৎসা দিচ্ছে। বাইরে মহিলাদের পরামর্শ দিচ্ছে একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক। এই দৃশ্য জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের। পাশে টিন সেট ডরমিটরি, কেউ সেখানে থাকে না। চারপাশে বিভিন্ন ঘাসে ভরে গেছে, অপরিষ্কার, মশা এবং পোকামাকড়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে পুরো চত্বর। এই বেহাল দশা দেখার যেন কেউ নেই। মেডিকেল অফিসারের রুমে ঢুকে দেখা গেলো রোগী দাঁড়িয়ে আছে।

উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিমল চন্দ্র জানান, এখানে পার্মানেন্ট মেডিকেল অফিসার নাই, তিনি এখানে সপ্তাহে দুইদিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জানান, শরিফপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এমএলএসএস, ক্লিনার, ফার্মাসিস্ট নাই। এতগুলো কর্মচারী এবং মেডিকেল অফিসার না থাকায় সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে।

পরিবার কল্যাণ সহকারী পরিদর্শক সুফিয়া আক্তারকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কেন ডরমিটরিতে থাকেন না? উত্তরে তিনি বলেন, ডরমিটরিতে থাকার পরিবেশ নাই। দেখা যায়, মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য বাউন্ডারি দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ডরমিটরিতে কেউ থাকেনা বলে সেটা মাদকের আখড়া হিসেবে ব্যবহার করে মাদকাসক্তরা।

ব্রহ্মপুত্রের তীরে জামালপুর ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। জামালপুর সদর উপজেলার সবচেয়ে জনবহুল ইউনিয়নের এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী সেবার জন্য আসে।

জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ জন নারীর নরমাল পদ্ধতিতে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। প্রায় প্রতিবছর নরমাল ডেলিভারির দিক দিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে এই পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এখানে নারী, শিশু, গর্ভবতীদের চিকিৎসার পাশাপাশি কিশোরীরা বিভিন্ন পরামর্শের জন্য আসে। পাশের উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা চিকিৎসা এবং পরামর্শ নিতে আসে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। অপরদিকে, এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জায়গা নিয়ে মামলা চলছে। জমির মালিকানা দাবী করা মহিলাকে পাওয়া যায়নি বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উপজেলা পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মাজেদুর রহমানের কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায় নি, মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, তিনি পার্শ্ববর্তী অন্য একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছেন। তিনি জানান, শরিফপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জনবল সংকট আছে। জনবলের চাহিদা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। নতুন বিল্ডিং অনুমোদন হয়েছে, দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা করছেন। জমি বেদখলের বিষয়ে তিনি জানান, জমি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে, অধিদপ্তর সেটা দেখছে।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত