লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২২, ১৬:০৪

গত ৩০ নভেম্বর ২০২১ একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘বিধি ভেঙে দুই জায়গার বেতন-ভাতা নিচ্ছেন লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল’ শিরোনামে সংবাদ ছাপা হয়। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক-এর বরাত দিয়ে সংবাদে উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক কর্তৃক দুদকে আবেদন দেয়া হয়েছে মর্মে লেখা হয়। পরবর্তীতে ‘কী এত মধু লালমাটিয়া মহিলা কলেজে’ শিরোনামে বিগত ১০ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে আরো একটি দৈনিক পত্রিকায় একই অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লিখিত পত্রিকায় প্রকাশিত কোন অভিযোগেরই সত্যতা মেলেনি।

বিগত ৭ ও ৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক লালমাটিয়া মহিলা কলেজ নিরীক্ষা ও পরিদর্শন করে। নিরীক্ষা ও পরিদর্শন প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে কলেজের তহবিল তছরুপ, কলেজ সরকারিকরণের নিমিত্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৫৫ জন শিক্ষক নিয়োগ, একই সময়ে দুই হেড থেকে একই বেতন-ভাতা গ্রহণ, কলেজের বাসায় থাকা অবস্থায় বাসা ভাড়া ভাতা গ্রহণ, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার সম্মানী খাতে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতির মাধ্যমে ২০১২ সাল থেকে নিজের আয়করের টাকা কলেজ তহবিল থেকে পরিশোধ সংক্রান্ত কোন অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর দপ্তর কর্তৃক লালমাটিয়া মহিলা কলেজ বিগত ১০/১২/২০১৩ তারিখে সর্বশেষ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করা হয়। ওই তারিখ থেকে অর্থাৎ‍ বিগত ১০/১২/২০১৩ তারিখ থেকে ০৮/০৪/২০২২ পর্যন্ত প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিক, ভৌত অবকাঠামোগত ও উন্নয়ন এবং আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত সকল তথ্য ও উপাত্ত এবং সংশ্লিষ্ট সকল দালিলিক প্রমাণাদি পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষান্তে উল্লিখিত প্রতিবেদনের মন্তব্য ও সুপারিশে তুলে ধরা হলো:-

প্রশাসনিক মন্তব্য ও সুপারিশ এর (ক)-তে প্রতিষ্ঠাতা সংক্রান্ত তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১০ সালের পূর্ববর্তী সময়ে প্রতি বিষয়ে কাম্য সংখ্যক ন্যূনতম ১০ জন শিক্ষার্থী না থাকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অধিভুক্তি স্থগিত করে রাখা কলেজটি- তৎপরবর্তী পরিচালনা পরিষদ ও অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে সেরা মহিলা কলেজ ও মডেল কলেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়াও আর্থিকভাবে চরম সঙ্কটে নিপতিত কলেজটি বর্তমান কলেজ প্রশাসন কর্তৃক ২০১২ সাল থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে কোন ফি না বাড়িয়ে, সকল পরিচালনা ব্যয় ও উন্নয়ন ব্যয় ছাড়াও শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর সুবিধা বাবদ প্রায় ২১.১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করার পর কীভাবে প্রায় ৮২ কোটি টাকা তহবিল সৃষ্টি করা হলো।

প্রশাসনিক মন্তব্য ও সুপারিশ এর (ঘ)-তে গভনিং বডি সংক্রান্ত তথ্য ও মন্তব্যে অ্যাডভোকেট জাহঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে পরিচালনা পরিষদ ও বর্তমান অধ্যক্ষের উল্লেখযোগ্য অভিনব উদ্যোগ ও কার্যক্রম দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হতে পারে মর্মে উল্লেখ করে তা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রশাসনিক মন্তব্য ও সুপারিশ এর (ঝ)-তে নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ও মন্তব্যে কলেজের নিয়োগ সংক্রান্ত সকল তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি সরকারিকরণের নিমিত্তে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা পর অত্র কলেজে কোন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়নি মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৫৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সংক্রান্ত কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

প্রশাসনিক মন্তব্য ও সুপারিশ-এর (ড-২)-তে অধ্যক্ষের বেতন ভাতা যাচাই সংক্রান্ত তথ্য ও মন্তব্যে দুর্নীতির মাধ্যমে বেতন-ভাতা গ্রহণ, একইসময়ে দুই হেড থেকে বেতন ভাতা গ্রহণ, কলেজের বাসায় অবস্থানকালে বাসা ভাড়া ভাতা গ্রহণ, ২০১২ সাল থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে কলেজ তহবিল থেকে নিজের আয় কর পরিশোধ এবং নিজের চিকিৎসা খরচের নামে কলেজ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার কোন অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

আর্থিক মন্তব্য ও সুপারিশের (চ)-তে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃপরীক্ষাসহ বন্টনযোগ্য খাতের আয় ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য ও মন্তব্যে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বরং এখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১২ ২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২০-২০২১ শিক্ষা বর্ষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা খাতে আদায় হয়েছে ৮,৪৮, ৮৩,২৭০/ টাকা। কিন্তু উক্ত সময়ে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, কমিটি ও সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে ৪,১৯,২৪,৫২৩/-টাকা। অবণ্টিত অবস্থায় কলেজ তহবিলে জমা আছে ৪,২৯,৫৮,৭৪৭/-টাকা। এ বিষয়টিকে একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ কলেজের অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী উল্লিখিত অবন্টিত টাকার মধ্যে ১৪% হিসেবে বিগত প্রায় ১০ বছরে অধ্যক্ষের প্রাপ্য অংশ ছিল প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।

আর্থিক মন্তব্য ও সুপারিশের (জ-৩)-এ সাধারণ তহবিল সংক্রান্ত তথ্যে পরিদর্শনের তারিখ পর্যন্ত কলেজ তহবিলে উদ্বৃত্ত ৮১.১১ কোটি টাকা সম্পর্কে বলা হয়েছে এ অসামান্য সফলতা প্রকৃতপক্ষে সম্ভব হয়েছে বর্তমান কলেজ প্রশাসন কর্তৃক নিজস্ব সফটওয়ারের মাধ্যমে হিসাব পদ্ধতির আধুনিকায়ন, সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে সকল লেনদেন সম্পাদন, নিয়মিত ইন্টারন্যাল চেকিং এবং সকল আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে। এ সকল নীতিমালা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় হতে পারে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এক শ্রেণির স্বার্থলোভী মানুষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে আসছে, যা আমার সম্মানহানী হচ্ছে। আমি অনুরোধ জানাবো গণমাধ্যমের কাছে আপনারা সত্য ও নির্ভুল সংবাদ প্রকাশ করবেন।

সাহস২৪/রাজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত