লক্ষ্মীপুরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ভাঙায় যুবক কারাগারে

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২২, ১৯:১২

লক্ষ্মীপুরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙার সময় আটক রাসেল কবির নামের এক যুবককে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় ট্রাফিক চত্ত্বরে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধু ম্যুরালটি ভাঙচুরের সময় তাকে আটক করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আটক রাসেল কবির সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আমানী লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বাড়ির মো. হানিফের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের চারপাশে থাকা কয়েকটি গ্লাস লাঠি দিয়ে ভাঙছিলেন রাসেল। এসময় আশপাশের লোকজন তা দেখতে পেয়ে তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। আটকের পর সাংবাদিকদের কাছে রাসেল নিজেকে  শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, গোলাম আজমের ছেলের নির্দেশে তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন। তার সঙ্গে গোলাম আজমের ছেলের যোগাযোগ রয়েছে। এ কাজের জন্য কোনো টাকা নেননি তিনি। এর সুফল তিনি কেয়ামতে পাবেন বলে দাবি করেন।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল হক বলেন, আমির হোসেন নামের একজন বাদী হয়ে মামলা করার প্রেক্ষিতে রাসেলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। জানা যায় মামলার বাদী আমির হোসেন লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য। লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি নিছক ঘটনা হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না। আটক যুবককে রিমান্ডে এনে কার মদদে, কারা তাকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা বের করতে হবে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

এদিকে রাসেলের মা পারুল বেগম জানান, আমার ছেলে রাসেল মানুসিক রোগী। গত ৫ বছর থেকে আমরা তার চিকিৎসা করছি। রাসেল তার দুই ভাই ফারুক ও ফেয়ার এর সাথে প্রবাসে (ওমান) ছিলো। ২০১৭ সালে আমার ছোট ছেলে হৃদয় নিখোঁজ হয়। ছোট ভাই নিখোঁজের খবর শুনে রাসেলের মানুসিক সমস্যা দেখা দিলে তার দুই ভাই রাসেলকে দেশে পাঠায়। রাসেল ঘর এবং ঘরের আসবারপত্র ভাঙ্গচুর করে আমাদের মারতে আসে। তাই আমরা তাকে লোহার শিকল দিয়ে তালা মেরে বেধে রাখি। সে টয়লেটে যাবে বলেছে তাই তার শিকল খুলে দিতেই সে দৌড়ে পালিয়েছে। সন্ধ্যার পরে খবর আসে রাসেল দেউলিয়া বাজারে গিয়ে কয়েকজন মাছ ব্যাবসায়ীর মাছের ডালা ফেলে দিয়েছে। পরে রাসেলের বাবা গিয়ে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সমাধান করে এসেছে। কিন্তু রাতে শুনি সে লক্ষ্মীপুর গিয়ে এই ঘটনা করেছে। আমার দুই ছেলে প্রবাসে এক ছেলে নিখোঁজ তাই এই পাগল ছেলেকে নিয়ে আমি বেঁচে আছি। এছাড়াও তার পরিবারের কারো সাথে কোন রাজনৌতিক দলের সাথে সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি। এই সময় রাসেলের বোন রাবেয়া আক্তার, পলি আক্তার এবং ভগ্নিপতি আনোয়ার, চাচাতো ভাই নাছির উপস্থিত ছিলেন।

চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আমি রাসেলকে দীর্ঘ দিন থেকে চিনি। সে মানুসিক রোগী এই কথা সত্য। লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী চত্ত্বর এলাকায় ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ম্যুরাল’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতিতে ম্যুরালটি বাস্তবায়ন করে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ। (১৬ ডিসেম্বর২০১৮ সাল) সকাল থেকে মুরালটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে শহরের উত্তর তেমুহনী চত্ত্বর।
ম্যুরালটির দক্ষিণ পার্শ্বে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার, পূর্ব পার্শ্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের চিত্র, উত্তর পার্শ্বে মুক্তিযুদ্ধের কিছু চিত্র এবং পশ্চিম পার্শ্বে ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠের ছবি অংকন করা হয়েছে। দেশের অভিজ্ঞ স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে ম্যুরালটি নির্মাণ করা হয়েছিলো।

সাহস/রকি/রাজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত