হাতিয়া গণহত্যা দিবস আজ

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১২:২১

সাহস ডেস্ক

আজ শনিবার (১৩ নভেম্বর) হাতিয়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ব্রহ্মপূত্র নদ অববাহিকায় হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুটি গ্রামের ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের উপর নারকীয় তাণ্ডব চালায় পাকবাহিনী। হত্যা করে ৬৯৭ জন মানুষকে। নির্মম এ হত্যাযজ্ঞে সেদিন রেহাই পায়নি মায়ের কোলে থাকা শিশু সন্তানও। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্ব না পেলেও উলিপুরের মানুষের কাছে তা স্মরণীয় হয়ে আছে।

সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৩ রমজান শনিবার। যখন ফজরের আজানের ধ্বনী মসজিদ হতে আসছিল। কোথাও কোথাও নামাজের প্রস্ততি চলছিল। ঠিক ঐ সময় ঘাতকদের মুহুর্মুহু মর্টারের শব্দে যেন সব কিছুই স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষণেই ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার মানুষের এলোপাতাড়ি দৌড়ঝাপ এবং আর্তচিৎকারে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতাড়না হয়।

অনেকে ব্রহ্মপূত্র নদে ঝাঁপ দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে। এসব অসহায় গ্রামবাসীর জীবন বাঁচানোর চেষ্টা মুহুর্তেই শেষ হয়ে যায়। পাক-হানাদার বাহিনী, তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-সামস বাহিনীর সহযোগিতায় গ্রামটি ঘিরে ফেলে। তারা আত্মগোপনে থাকা গ্রামের অসহায় মানুষগুলোকে ধরে এনে দাগারকুটিতে জড়ো করে হাত-পা বেঁধে নির্দয় ভাবে গুলি করে হত্যা করে। 

ঐদিন পাক-হানাদার বাহিনীর দিনভর হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ চালায় গ্রামগুলোতে। আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়, হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর,দাগারকুটি, হাতিয়া বকসি, রামখানা ও নয়াদাড়া গ্রামের শত শত ঘর-বাড়ী। মুহুর্তেই গ্রামগুলো পরিণত হয় ধ্বংস স্তুপে। 

দাগারকুটি গ্রামেই ৬৯৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে গণকবর দেওয়া হয়। আজ এই গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ দুটোই ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু বিলীন হয়নি গ্রামবাসীর সেদিনের আত্মত্যাগের ইতিহাস। সেদিনের সেই গণহত্যা আর তার ভয়াবহতা আজও হাতিয়ার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের মানুষের আত্মত্যাগ। হত্যাকাণ্ডের বিচার, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের মর্যাদা, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, স্মৃতিস্তম্ভে নামফলক স্থাপন এবং শহীদ পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে সরকারকে এগিয়ে আসার দাবি তাই শহীদ পরিবারসহ এ এলাকার সাধারণ মানুষের। 
সাহস২৪.কম/এমআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত