পুলিশি পাহাড়ায় কতদিন নিরাপদ ঝুমন দাসের বাড়ি?

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:০৩

ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অভিযোগ তুলে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাসের নামে। চলতি মাসের ২৩ তারিখ ১৯১ দিন পর সিলেট এলাকার বাইরে না যাওয়ার শর্তে জামিন পান তিনি। স্থানীয়রা জানান, জামিন পাওয়ার পর থেকেই ঝুমন দাসের বাড়িতে প্রতিনিয়ত টহল দিচ্ছে শাল্লা থানা পুলিশের একটি বাহিনী।

রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সাধারণ জনগণের জান মালের নিরাপত্তায় বাড়ি বাড়ি পুলিশি টহল আদৌ নিরাপত্তাজনিত সংকট মোকাবেলায় কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে তা নিয়ে সন্দিহান দেশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এই ঘটনার জের ধরে দেশে জঙ্গিবাদ এবং তার মদদদাতাদের চড়াও হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঝুমন দাসের জামিনের অগ্রগতি নিয়ে তার ভাই নুপুর দাসকে সাহস২৪ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে পুলিশি টহলের এমন তথ্য জানান তিনি।

তিনি জানান, তার (ঝুমন দাস) জামিনের পর থেকেই পুলিশ বাড়িতে ডিউটি দিচ্ছে। রাতেও ওরা থাকে, সারা রাত। প্রথম দিন পাচজন, গত (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত্রে তিন জন। তাছাড়া এলাকার দাড়াইন বাজার নামক এলাকায় তারা দিনেও দশ পনের জনের একটা টিম নিয়ে টহল দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার ওফিসার ইন চার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন, এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমাদের টহল ডিউটি আছে। নিরাপত্তার জন্য আমাদের সবসময়ই সার্ভিস রাখতে হয়।

ঝুমন দাসের উপর ফিরতি 'অ্যাটাক' হওয়ার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এলাকা খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবেই আছে। কোনো কিছুই তো হান্ড্রেড পার্সেন্ট (শতভাগ) নিশ্চয়তা দেওয়া যায়না। তবে আমাদের কাছে এট্যাক হওয়ার আশঙ্কার কোনো গোয়েন্দা রিপোর্ট নাই।

তবে বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রাণী দাস সাহস২৪কে বলেন, জামিন মঞ্জুরের পর থেকে দুইদিন ধরে পুলিশ আমাদের বাড়ির আশেপাশে অবস্থান করছে। আমাদের পাশে আছেন এবং ভয় না পেতে বলছেন তারা (পুলিশ)।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় প্রায় সাত মাস ধরে কারাবন্দি ছিলেন ঝুমন দাস। সাত বার জামিন আবেদনের পরেও বার বার নাকচ হয়ে ফিরে গেছেন জুমনের পরিবার। এখন জামিন পাওয়ার পরও ভীতি ছাড়ছেনা ঝুমন পরিবারের পিছু। পুলিশের নিরাপত্তা টহল আরো তুঙ্গে তুলছে সে আতঙ্ক। নাগরিকরা বলছেন, এভাবে কতদিন জোড়াতালি দিয়ে প্রশাসন জননিরাপত্তা নিশ্চিত করবে? এক ঝুমন দাস ছাড়াও হাজারো ঝুমন দাসদের এমন প্রাণনাশী আতঙ্ক নিরসণের দাবি তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে সচেতন নাগরিকরা।

দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, দীর্ঘ ৭-৮ মাস কারাবন্দীত্বের পর এখন ঝুমন দাস বাড়িতে যাবে। এখন বাড়িতে গেলে তার নিরাপত্তা নেই। এরকমই একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে পুলিশের তৎপরতা এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড দেখে।

তিনি বলেন, এই যদি হয় আমাদের রাষ্ট্রীয় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। তাহলে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, বেদনাদায়ক এবং অগ্রহণযোগ্য। সুতরাং আজকে এই ধর্মান্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠীর যে উত্থান ও বিস্তার ঘটেছে এটি যদি আমরা রোধ করতে না পারি তাহলে কিন্তু আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, সেই বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ হবে।

দেশের মানুষকে এবং রাষ্ট্রের প্রশাসনকে এই উগ্রবাদী ও হুমকি দাতা গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় আনতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কতদিন পর্যন্ত এবং কতজন ঝুমন দাসকে তারা পাহাড়া দিবে? এটাতো অসম্ভব কাজ। অবাস্তবও। তাহলে দেশের মানুষের নিরাপত্তার জায়গাটি কোথায় দাঁড়াচ্ছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এই জায়গা থেকে আমাদের যদি বাঁচতে হয়। এই উগ্রবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.