হা-মীম গ্রুপের শ্রমিক আন্দোলন: চিকিৎসার টাকা পায়নি গুলিবিদ্ধ কাঞ্চন মিয়া

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪৫

চলতি বছরের ১০ মে ইদের ছুটি বাড়ানোর আন্দোলনে হা-মীম গ্রুপের গুলিবিদ্ধ শ্রমিক কাঞ্চন মিয়া। ছবি: সাহস২৪

টঙ্গি মিল গেটে অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ শ্রমিক কাঞ্চন মিয়া কেটে ফেলা অন্ত্র নিয়ে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করছেন রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মানসিক ও পারিবারিক যে ক্ষতি হয়েছে, এক কোটি টাকা দিলেও সে ক্ষতি পোষাণো সম্ভব না বলে সাহস২৪কে তিনি জানান, “আফনার ভুরিডা ফালাইয়া যদি এক কোটি টেহা দেই নিবাইন? আজাদ সাহেবের (ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হা-মীম গ্রুপ) ভুরিডা ফালাইয়া যদি এক কোটি টেহা দেই, নিবো?”

চলতি বছরের ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ছুটি বাড়ানোর জন্য আন্দোলনে নামেন হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকেরা। গত ১০ মে সেই আন্দোলনে শিল্প পুলিশ ব্রাশ ফায়ার করলে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ২০ জন তৈরীপোশাক শ্রমিক। গুড়ি গুড়ি বুলেটের আঘাতে ঝাঁজড়া হয়ে যায় তাদের শরীর। গুলিবিদ্ধদের একজন কাঞ্চন মিয়া এখন লড়াই করে চলেছেন মৃত্যুর সঙ্গে।

বাংলাদেশ শ্রম আইন- ২০০৬ এর প্রথম ও অষ্টম অধ্যায় অনুযায়ী, আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ দায়ভার কারখানা মালিকপক্ষের নেওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম অপারেশনের পুরো টাকাটা দেওয়ার কথা থাকলেও সে টাকা পাননি বলে দাবি করেছেন কাঞ্চন মিয়ার পরিবার। তারা বলছেন, গত ২৬ মে পঞ্চাশ হাজারের একটা চেক ধরিয়ে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয় মাত্র ৫ হাজার টাকা, যেখানে তাদের চিকিৎসা বাবদ মোট খরচ হয়েছিলো ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা (৬ জুন ২০২১ পর্যন্ত)। বাকী টাকা এখনও পরিশোধ করেনি হা-মীম গ্রুপ বা রাষ্ট্র।

কাঞ্চন মিয়া সাহস২৪কে বলেন, "আমি এখন কি করবো কোনও দিশা পাই না! আমার কি দোষ ছিলো? আমারে হেরা ধইরা রাখতো বাইন্ধা রাখতো। আমারে হেরা গুলি করলো কেন?"

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর উপযুক্ত বিচার দাবি করেন কাঞ্চন মিয়া। তিনি বলেন, "কোম্পানি কেন আমাকে গুলি করাবে? আমি কি চোর ছিলাম না ডাকাত ছিলাম? আমি যে তার কাছে ১২ বছর কাজ করছি। সে আমার কামাই খায় নাই! আমি তার কামাই খাই নাই! কি দিলো আমারে ১২ বছর চাকরীর বিনিময়ে? দুইডা গুলি?"

ছুটি বাড়ানোর দাবিতে হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকদের আন্দোলন

চলতি বছরের ১৩ জুলাই ছিল ঈদ-উল ফিতর। বছরে মাত্র দুটো ঈদেই স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পান শ্রমিকেরা। ঈদে বাড়তি ছুটি পাওয়ার আশায় বন্ধের দিনগুলোতেও কাজ করেছিলেন হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকেরা। সরকার ঘোষিত তিন দিনের ছুটি বাড়িয়ে ১০ দিনের ছুটি দাবি করেন গাজীপুরের টঙ্গী ও কালিয়াকৈরের দুটি কারখানার শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরও ১০ দিনের ছুটির দাবি নাকচ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে বাকবিতণ্ডার পর সিদ্ধান্ত না মেনে অফিস থেকে বের হয়ে আসেন শ্রমিকেরা।

শ্রমিকদের ভাষ্য মতে, ঈদে বাড়তি ছুটির দাবি নিয়ে তারা কাজ বন্ধ রেখে জমায়েত হন টঙ্গী মিল গেটে। এ সময় আচমকা পুলিশ এসে শ্রমিকদের বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। একজনের মাথাও ফাটিয়ে ফেলে। বিনা কারণে কেন তাদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে জানতে চাইলে পুলিশ আরও মারমুখী হয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে। তারপর শুরু হয় রাবার বুলেট ছোঁড়া।

সেদিন কাঞ্চন মিয়া (৫০), মিজানুর রহমান (২৪), হাসান মিয়া (২৬), রুবেল মিয়া (২২), জাহিদ হোসেন (২৫), রনি (২৪), মামুন (২৬), সোহেল (২২), রুবেল হোসেন (২৪), ইমরান হোসেন (২৪), রাজীবুল ইসলাম (২৬), মামুন মিয়া (২৭), রবি (২১), লতিফ (১৯), রনি (২২), এহসানুল হক (৩৫), রাজিবুল (২৬), কলি বেগম (২৪), নিজাম উদ্দিন (৩০), সমলা (২৫), ইয়াসিন (২০), হাসিনা (৪০), সাব্বির (২২), সাবিনা (২৫), রিনা বেগমসহ (২০) গুলিবিদ্ধ হন কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক। গুরুতর আহত ১৩ জন শ্রমিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে দেওয়া হয়েছিলো অন্যদের চিকিৎসা।

ঘটনার দিন পুলিশের বক্তব্য

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের (জোন-২) অতিরিক্ত সুপার মোঃ. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সরকার তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করলেও টঙ্গির মিল গেইট এলাকায় হা-মীম গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা ১০ দিন ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ করে। দুপুরের দিকে তারা কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের সরাতে গেলে শ্রমিকরাই প্রথমে পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়ে। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।’ সূত্র: সারাবাংলা

অন্যদিকে ঘটনার পর গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোঃ সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, শ্রমিকেরা বেপরোয়া ভাবে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকায় তারা মৃদু প্রতিহত করেছেন। শ্রমিকদের হামলায় আহত হয়েছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ বেশ কয়েকজন। শ্রমিকেরা ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করে দিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। সূত্র: প্রথম আলো

বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া শ্রমিকদের বক্তব্য

ঘটনার দিন পায়ে গুলিবিদ্ধ রনি ইসলাম জানান, ঈদে বাড়তি ছুটির দাবি নিয়ে তারা কাজ বন্ধ রেখে টঙ্গী মিল গেটে জমায়েত হন। এ সময় আচমকা পুলিশ এসে শ্রমিকদের পেটাতে শুরু করে। একজনের মাথাও ফাটিয়ে ফেলে। কেনো বিনা কারণে তাদের ওপর হামলা চালানো হলও জানতে চাইলে, পুলিশ আরও মারমুখী হয়ে ওঠে, লাঠিচার্জ করে ও গুলি ছোড়ে। একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে আহত অপর দুই শ্রমিক সোহেল ও রুবেলের কাছ থেকে। সূত্র: প্রথম আলো

আহত শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এক পোশাক শ্রমিক অফিসকক্ষে গিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে ঈদের ছুটির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি আমাদের পক্ষ থেকে ১০ দিনের ছুটি চান। মালিক পক্ষ থেকে সাত দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ওই শ্রমিক বের হলে পুলিশ এসে তার মাথায় আঘাত করে। এতে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়। পরে অন্য শ্রমিকরা জড়ো হয়ে তাকে আঘাতের কারণ জানতে চান। এ সময় কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

টঙ্গীর হা-মীম গ্রুপের ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার পোশাক শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকারিভাবে ঘোষিত তিন দিনের ছুটির পরিবর্তে শ্রমিকরা ১০ দশ দিনের ছুটি দাবি করেন। কর্তৃপক্ষ সাত দিনের ছুটি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সোমবার সকালে ১০ দিনের ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে আমাদের ওপর হামলা ও গুলি করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। তাদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

প্রথম বারের পর দ্বিতীয় অপারেশনের জন্য দিন গুণছেন হা-মীম গ্রুপের গুলিবিদ্ধ শ্রমিক কাঞ্চন মিয়া। ছবি: সাহস২৪

শিল্প পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হওয়া হা- মীম গ্রুপের শ্রমিক কাঞ্চন মিয়া

১০ মে ২০২১। হা-মীম গ্রুপের অন্যান্য শ্রমিকের মত ১০ দিনের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে অংশ নেন কাঞ্চন মিয়াও। টঙ্গি মিল গেটে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলে কোনও প্রকার উস্কানি ছাড়াই গুলি বর্ষণ শুরু করে অবস্থানরত শিল্প পুলিশ।

প্রথম দফার গুলি লেগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কাঞ্চন। অনেক কাকুতি মিনতি করার পরও পুলিশ গুলি ছুঁড়তে থাকে তার তলপেট লক্ষ্য করে। পরে টানা ২ ঘণ্টা একটি টয়লেটে আটকে রাখা হয় তাকে। তার ভাষ্যমতে পুলিশ তাকে বাইরের পরিস্থিতির কথা বলে ভেতরে আটকে রাখে।

ছুটি নিয়ে ওই আন্দোলনে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না কাঞ্চন মিয়ার। তিনি বলেন, 'যহন দেখছি গুলিবিদ্ধ লাশ থাইকা আমার উপরে আইসা পরছে রক্তের ছিডা, পরে আমি মাতালের লাহান হইয়া আরি আন্দোলনে গেছি। হা-মীম গ্রুপ পুলিশ দিয়া আমারে দুইডা গুলি করাইছে। একটা গুলি করাইছে পরে আমি পইড়া গেছি গা।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি চাইছিলাম বাথরুম থাইকা হামাগুড়ি দিয়া বাইরাইয়া আইয়া পরতাম। হামাগুড়ি দিয়া বাইরইলে আমার লোকজন আমারে বাঁচাইবো, মেডিকেলে আনবো। এইরকম মনোভাব নিয়া আমি চাইছিলাম হামাগুড়ি দিয়া বাইরাইয়া আইয়া পরতাম। পরে পুলিশ আমারে ধইরা নিয়া গিয়া আরেকটা গুলি করছে। এই গুলিডায় আমি অবশ হয়ে গেছি। আমি ঠ্যাং ঠুং কিছুই লাড়াইতে পারি না। পরে আমি চিল্লাচিল্লি করছি, আমারে বাঁচান! আমারে বাঁচান!'

অনেক কাকুতি মিনতির পরেও পুলিশ তাকে বের হতে দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, "পুলিশ কয়, 'তোরে অহন লইয়া গেলে শ্রমিক আন্দোলন আরও বেশি হইবো। সবাই দেখবো। দেখলে হা-মীম গ্রুপের বিরাট ক্ষতি হইবো। তোরে লইয়া যাওন যাইতো না'।"

পরে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তাকে।  তিনি বলেন, "আনার পরে তিন দিন রিপোর্ট দেখতে দেখতে ভুড়ি (অন্ত্র) পচে গেছে। তিন দিন পরে গুলি বাইর করছে। তলপেটের ভুড়ি কাইটা ফেলছে। এখন তলপেটে কোনও ভুড়ি নাই আমার।"

কাঞ্চন মিয়ার স্বাভাবিক প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা এখন বন্ধ। বিকল্প ব্যবস্থা করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের আইসিইউতে টানা ৬ দিন জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েন কাঞ্চন মিয়া। ফলশ্রুতিতে আজীবন পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি।

এবছরের ৬ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বিবৃতি পাঠিয়ে চিকিৎসাধীন কাঞ্চন মিয়া বলেন, "আজকে গণতান্ত্রিক উপায়ে দাবী তুলতে যেয়ে আমাকে গুলি খেয়ে পঙ্গু হতে হয়েছে। এই ঘটনার পুরো দায়ভার হা-মীম গ্রুপ কর্তৃপক্ষ এবং সরকারকে নিতে হবে। সেই সাথে আমি ও আমার অপরাপর ভাইদের উপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলা এবং গুলির ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।"

সেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, "শ্রমিকরা অর্থনীতির চালক। অথচ আমি গুলি খেয়ে পঙ্গু হওয়ার পর আমার সুচিকিৎসা হয়নি এবং চিকিৎসা নিয়ে নানা রকম টালবাহানা চলছে। এ পর্যন্ত আমার চিকিৎসা বাবদ ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রমিক ফান্ড থেকে দেয়া হয়েছে ৫০,০০০ টাকা, শ্রম মন্ত্রীর তরফ থেকে ৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ টাকা পেতে ও অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অন্যদিকে প্রথম পর্যায়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ ৫৫,০০০ টাকার ঔষধ, পরীক্ষা নিরীক্ষা বাবদ দিয়েছে। এখন তারা এটা সেটা বলে টালবাহানা করছে। এছাড়াও বিবিধ খরচ বাবদ ৬৩,৮০০ টাকা খরচ হয়েছে।"

কাঞ্চন বলেন, "আমি আরও দশ বছর চাকরি করতে পারতাম। ডাক্তার বলছে, আমার আর কিছু করার মত অবস্থায় নাই। আমার বিগত ১২ বছরের বেসিক বেতন, আগামী দশ বছরের সম্পূর্ণ বেতন, বিশেষ বোনাস (ঈদ)- সব কোম্পানির দিতে হবে।'

কান্নায় ভেঙে পড়ে কাঞ্চন বলেন এই চাকরীকে কেন্দ্র করে তার আট সদস্যের পরিবারের ভরণ পোষণ চলতো। সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত কাঞ্চন মিয়া। সরকার ও হা-মীম গ্রুপের কাছে সমস্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।

হা-মীম গ্রুপের ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার সিনিয়র অপারেটর কাঞ্চন মিয়া পাঁচ সন্তানের পিতা। বড় ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। ক্লাস-এসাইনম্যান্ট কিছুই করতে পারছে না সে। বাবাকে দেখাশোনা করতে হাসপাতালেই দিন রাত কাটাচ্ছে গুলিবিদ্ধ কাঞ্চন মিয়ার এ বড় সন্তান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সে বিচার চায় তার বাবার উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সে তার বাবার স্বাভাবিক জীবন চায়।

কাঞ্চনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলছেন, তার স্বামী যদি অপরাধও করে থাকে, গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্বের জীবন কখনই শাস্তি হতে পারে না। সারাটাজীবন ঘর বন্দি কাটাতে হবে তার স্বামীকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, "এ পর্যায়ে আমার পোলাপান নিয়া না খেয়ে থাকতে হয়। ধার কইরা, ঋণ কইরা, হাওলাত কইরা এই পর্যন্ত চলতাছি। আমার ক্ষমতা নাই যে ওর (কাঞ্চন) তলে দুইডা টেকা ভাঙমু। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উনার বিবেকে যা ধরে তাই করুক।"

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত