ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে শাহবাগে সমাবেশ

সাত সাত বার জামিন কীভাবে না মঞ্জুর করা হলো?- সুলতানা কামাল

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:৩৪

ঝুমন দাস আপনের মুক্তি দাবির বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ঝুমনের স্ত্রী রাই সরকার রাই ও তার ১১ মাস বয়সী ছেলে সৌম্য দাস। ছবি: বাঁধন/সাহস২৪

১৭৮ দিন কারাবন্দী সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাস আপনের মুক্তির দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ। সমাবেশে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, 'ঝুমন দাসের মত একজন নিরীহ ব্যক্তি যার কোনও রকম দোষ নেই। একটা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যাকে আটকে রাখা হয়েছে। সে ব্যক্তির সাত সাত বার জামিন কীভাবে না মঞ্জুর করা হলো?'

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে এ বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে দেশের সর্বস্তরের সচেতন মহল। যারা সরাসরি যুক্ত হতে পারেননি এমন অনেকেই মুঠোফোনে যুক্ত হয়ে দাবি তোলেন ঝুমন দাসের মুক্তির।

প্রকাশক ও সম্পাদক রবিন আহসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আকরামুল হক। সমাবেশের শুরু থেকেই উপস্থিত ছিলেন ঝুমন দাস আপনের স্ত্রী রাই সরকার রাই ও তার ১১ মাস বয়সী ছেলে সৌম্য দাস।

হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টেটাস দেওয়ায় গ্রেপ্তার হন ঝুমন। এরপর শাল্লার হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘর বাড়িতে ভাঙচুর ও তাণ্ডবযজ্ঞ চালায় মামুনুলের অনুসারীরা।

ঝুমন দাসের মুক্তি দাবির বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: সাহস২৪

সমাবেশে বক্তারা, ঝুমন দাস আপনের স্ত্রী, পরিবার ও এলাকাবাসীর উপর ঘটে যাওয়া হেনস্তার তীব্র নিন্দা জানান। ঝুমন দাসের নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তোলে বক্তারা বলেন, অনতিবিলম্বে ঝুমন দাস আপনের মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে ঝুমন দাসের অনতিবিলম্বে মুক্তি না দিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমুখে আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন বক্তারা। 

সমাবেশে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, 'কার ইশারায় ঝুমন দাসের জামিন হয় না? প্রকাশ্যে একজন নারীকে নিপীড়ন করা বোট ক্লাবের পরিচালককে জামিন দেওয়া হয়। অথচ একজন নিরপরাধ ঝুমন দাসের জামিন হয়না।'

'আজকে আমরা ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে যে সমাবেশ করছি এটাই হোক শেষ সমাবেশ। এরপরও যদি আমাদের সমাবেশ করতে হয় তাহলে আমরা আর শাহবাগে দাঁড়াবো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অভিমুখে আমরা যাবো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও করবো।'

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে টেলিফোনযোগে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, খুবই দুঃখের বিষয় যে, মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া দেশ। যার সবচেয়ে বড় নীতি ছিলো, একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হবে। যেখানে প্রতিটি নাগরিক তার সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারে। কোনও নাগরিক কিম্বা কোনও ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত, সামাজিক কিম্বা রাষ্ট্রীয় জীবনে দুশ্চিন্তায় থাকবে না যে, তার যেকোনও ভূমিকার কারণে সে রাষ্ট্র দ্বারা বৈষম্যের স্বীকার হতে পারে। সমাজে তার কোনও রকম অসম্মান বা অমর্যাদা হতে পারে। কিম্বা ব্যক্তিগত জীবনে সে কোনও শঙ্কা, অশান্তি কিম্বা উদ্বেগ নিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হবে।'

ঝুমন দাসের মুক্তি দাবির বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু। ছবি: সাহস২৪

তিনি বলেন, 'যারা ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে এসে একটা ভয়ঙ্কর রকম অপরাধ কর্ম করলো। একটা সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করলো, হামলা করলো। তাদের কারো কোনও শাস্তি হলো না। কিন্তু ঝুমন দাস একজন নিরীহ ব্যক্তি। যার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে এই কাণ্ডটা ঘটানো হয়েছিলো। তিনি আজকে কারাগারের পেছনে আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সাত সাতবার জামিনের আবেদন করা হয়েছে যেটা আমাদের নিম্ন আদালত নাকচ করে দিয়েছেন।'

পরীমনির ইস্যুতে উচ্চ আদালতের বিচারপতির বক্তব্যের বরাত দিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, 'আজকে নিম্ন আদালতের চরিত্রের কি অবক্ষয় ঘটেছে! নিম্ন আদালতের এমন আচরণের কী মানে থাকতে পারে! আজকে মাননীয় বিচারকের (পরীমনির মামলার উচ্চ আদালতের বিচারক) সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে এই প্রশ্ন তুলতে চাই, সভ্য সমাজে কি এটা চলতে পারে? একটা সভ্য ও উন্নত সমাজে, ঝুমন দাসের মত একজন নিরীহ ব্যক্তি যার কোনও রকম দোষ নেই। একটা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যাকে আটকে রাখা হয়েছে। সে ব্যক্তির সাত সাত বার জামিন কীভাবে না মঞ্জুর করা হলো?'

টেলিফোনে যুক্ত হয়ে নারী অধিকার কর্মী খুশি কবীর বলেন, 'আমরা লজ্জিত। ঝুমন দাসকে এখনও হাজতে থাকতে হচ্ছে। এই ধরনের অসভ্য আচরণ আমরা রাষ্ট্রের থেকে আশা করিনা। অনতিবিলম্বে ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করছি।'

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, 'যে মামুনুল হকের উগ্র সাম্প্রদায়ীকতার বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে। তার চাইতেও বেশি প্রমাণ পাওয়ার জন্য আজকে মামুনুল হক নিজেও কারাগারে।'

'কেন উত্তম বড়ুয়া, উজ্জ্বল, রসরাজ কিম্বা এই ঝুমন দাসেরা বারে বারে আক্রান্ত্র হচ্ছেন? তাদের নাম দিয়ে কোন রাজনীতি হচ্ছে। বাংলাদেশের কোন রাজনীতির বলী হিসেবে তারা ব্যবহৃত হচ্ছেন? আসুন আমরা সেই রাজনীতিটাকেও উৎপাটন করার জন্য প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি। নাহয় আজ আন্দোলনের মুখে ঝুমন দাস জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু এটাই শেষ না। এরপর অন্য আরেকজন ঝুমন দাস বা অন্য আরেকজন রতন লাল এই পথে দাঁড়িয়ে আছেন।

ঝুমন দাসের মুক্তি দাবির বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম। ছবি: সাহস২৪

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাইনরিটি রাইটস ফোরামের ঢাকা জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ নীরদবরণ মজুমদার, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্র নেতা শরিফুজ্জামান শরিফ, ঢাবি শিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক কাজী রফিক, জাবি শিক্ষক সুমন গুপ্ত, উদীচী সংগঠক বিমল মজুমদার, ডা. মোজাহিদুল হক, ঢাবি শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমূখ। সংহতি জানিয়েছেন সাহস২৪ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক সাকিল আহমেদ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাকর্মীরা।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত