ঝুমন দাসের জামিন নাকচ হওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২১, ২০:৪২

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৪০ দিন যাবত কারাবন্দি ঝুমন দাসের পঞ্চম বারের মত জামিন নাকচ এবং মুক্তির প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে ছাত্র-জনতা। 

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অভিযোগকারী ঝুমন দাসের জামিন নাকচ করে সুনামগঞ্জ জেলা দায়রা আদালত। এর প্রতিক্রিয়ায় আজ রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সম্মূখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাগরিকরা একাত্মতা পোষণ করে আয়োজন করে এ প্রতিবাদি সমাবেশ। 

সমাবেশে বক্তারা 'ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট-২০১৮'র কঠোর সমালোচনা করে এই আইন বাতিল করার দাবি তোলেন। এর সাথে সেন্ট্রাল গভার্নেন্স ওফ স্টাডিস এর বরাত দিয়ে একই আইনে হওয়া ৬ শত মামলার গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি তোলেন। সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগ এবং ভূয়া মামলার কঠোর সমালোচনা করে ঝুমন দাসের জামিন কেন হচ্ছে না সেসব প্রশ্ন তুলে ধরেন। তার সঙ্গে ঝুমন দাসের দ্রুত মুক্তি না হলে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন বক্তারা। 

সমাবেশে নারীবাদী এক্টিভিস্ট মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সাইদুল হক নিশান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রচার সম্পাদক রফিকুজ্জামান ফরিদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সহ সাধারণ সম্পাদক মেঘমল্লার বসু ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়। এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ছাত্র,যুব ও গণসংগঠনের নেতা কর্মীসহ সাধারণ নাগরিকরা।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে রাজু ভাষ্কর্যে এসে প্রতিবাদ সমাবেশটি শেষ হয়। 

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলতি বছরের মার্চের ১৫ তারিখ শানে রিসালত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। 

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে এর আগেই সমালোচনায় ছিলেন মামুনুল হক। দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এ অবস্থায় দিরাইয়ের সমাবেশে এসে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন মামুনুল। 

মামুনুল হকের সমালোচনা করে এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন দিরাইয়ের পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস আপন। স্ট্যাটাসে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগ আনেন মামুনুলের বিরুদ্ধে। 

ঝুমনের এমন স্ট্যাটাসে ক্ষেপে যান হেফাজত ও মামুনুলের স্থানীয়া অনুসারীরা। মামুনুলের নামে সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা ও অবমাননা বলে চালাতে থাকেন এলাকায় প্রচারণা। এতে এলাকাজুড়ে দেখা দেয় তুমুল উত্তেজনা। 

বিষয়টি বুঝতে পেরে গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে পুলিশের হাতে তুলে দেন ঝুমন দাসকে। হেফাজতে ইসলামসহ স্থানীয় মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ওই রাতেই স্থানীয় বাজারে বৈঠক করে প্রশাসন। এ সময় আটকের খবর জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শান্ত থাকার আশ্বাস দেন উপস্থিত সবাই। 

কিন্তু সারা দেশ যখন উৎসব উদযাপনে ব্যস্ত ঠিক ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। লুটপাট ও ভাঙচুর চালায় ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি ও মন্দিরে। 

শাল্লার এই তাণ্ডবে অভিযোগ ওঠে- পুলিশ আগে থেকে আভাস পেয়েও কোনও ব্যবস্থা নেয় নি। এই গাফিলতির অভিযোগের ঘটনার তদন্তে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিনকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরে ২৬ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেয় এই কমিটি। 

প্রতিবেদনে হামলার ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ সুপারসহ (এসপি) ১১ জনকে বদলি এবং ৬ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

নোয়াগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র দাস একটি নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঝুমন কোনো ধর্ম, রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বক্তব্য দেয়নি। সে একজন ব্যক্তির সমালোচনা করেছে। এ কারণে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে রাখা অযৌক্তিক। আমরা তার মুক্তি চাই এবং যারা আমাদের গ্রামে হামলা ও লুটপাট করেছিল সবার গ্রেপ্তার চাই।’ 

ঝুমন দাসের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি করছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে মানুষটা ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে কথা বলছে তাকে এভাবে হেনস্তার বিষয়টা আসলেই দুঃখজনক। এই মামুনুলদের মত ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে আসছে।  

সেখান থেকে ঝুমন দাসদের মত যুবকরা ধর্মের নামে এসব সাম্প্রদায়ীক সমস্যা নিরসনে নিজেদের মত প্রকাশ করছে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে এতটুকু অধিকার ঝুমন দাসদের মত যুবকদের না থাকলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি অচিরেই বিনষ্ট হবে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত