শুরু হলো বাঙালির শোকের মাস

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২১, ১১:৫০

আগস্ট মাস বাঙালির জন্য এক অন্য রকম বেদনার মাস, হারানোর মাস। এ দেশেকে ভালোবেসে যেই মহান নেতা তাঁর সারাজীবন উৎসর্গ করে গেছেন সেই দেশেরই কিছু ঘাতক রাতের আঁধারে চোরের মত এসে হত্যা করলো বাঙালির স্বাধীনতার স্তম্ভকে। আমরা হারালাম আমাদের প্রিয় জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশক হলেও এখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শূন্যতা অনুভব করে।

সেদিন আকাশে শ্রাবনের মেঘগুলি যেন পিতাকে হারিয়ে সমস্ত প্রকৃতি বিষন্ন হয়ে পরেছিল। কেঁদেছিল অঝোর ধারায়।  সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে আগস্ট মাসে যে নৃশংসতা-বর্বরতা ঘটেছে, তা আর প্রত্যক্ষ করেনি মানবসভ্যতা। পিতা হারানোর কান্নার অশ্রু হয়তো শুকিয়ে গেছে কোনোকালে, কিন্তু হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আজও বহমান। সেই ক্ষরণে যে দহন বাঙালির ধমনিতে, তা যে মিটবার নয়।

জাতির পিতাকে হত্যা করেও বাঙালির কাছ থেকে তাকে আলাদা করতে পারেনি ঘাতকরা। আগস্ট এলেই কোটি কোটি বাঙালি শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে তাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় বঙ্গবন্ধুকে ঠাঁই দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবি শামসুর রাহমান তার ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতায় লিখেছেন- ‘ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে চিরকাল, গান হয়ে নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা; যাঁর নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয় জ্যোৎস্নার সারস, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো দুলতে থাকে স্বাধীনতা, ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর ঝরে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।’

একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা চোরের মত রাতের আঁধারে দল বেঁধে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে খান্ত হয়নি। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকেও হত্যা করে। এছাড়াও ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিশপথে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেন বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাঙালি জাতির পিতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই কুচক্রী মহল ক্ষান্ত হয়নি তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইনও জারি করেছিল। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে ঘাতকরা চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ হোক; বাংলাদেশ একটি ‘অকার্যকর রাষ্ট্র’ হিসাবে পরিচিত লাভ করুক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্ককের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সব চক্রান্ত, সব ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অদম্য গতিতে; বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে উদার-অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বমঞ্চে সম্মানের আসনে আসীন হয়েছে বাংলাদেশ। তাই তো ঘাতকচক্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দেশ এগিয়ে চলছে সুনিশ্চিত বিজয়ের পথে।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাও বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে থাকেন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

শুধু দেশের বাইরে থাকার জন্য তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর শোক কখনো কাটিয়ে উঠবার নয়। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশের বিশাল শূন্যতা। বঙ্গবন্ধু ছিল, আছেন এবং একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক ও স্বাধীন বাংলাদেশের জনক হিসেবে সকলের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু মানেই বাঙালি, বাংলাদেশ এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত