রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২১, ০১:৪৫

সাহস ডেস্ক

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে স্থায়ী ভাবে ফেরত যেতে পারে, সেই মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বৈঠকে তিনি মূল-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় সাধারণ পরিষদের সভাপতি কক্সবাজারে তার সম্প্রতিক সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, আমরা বরাবরই রোহিঙ্গা সংকটের প্রধান কারণ সমাধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে স্থায়ী ভাবে প্রত্যাবর্তনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের জন্য আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছি।

ড. মোমেন রোহিঙ্গারা যেন দ্রুত বাংলাদেশ থেকে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অন্যান্য অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এই ভার্চুয়াল সভায় বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার পরিষদসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। সভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

ভার্চুয়াল সভায় প্যানালিস্টদের মধ্যে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিশেষ পর্যবেক্ষক টন অ্যান্ড্রুস, গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা অ্যালিস ডব্লিউ দেরিতু, কানাডা ও তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধিগণ এবং রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াই ওয়াই নু অংশ গ্রহণ করেন।

জিসিআর-২পি ড. সিমন অ্যাডামস এই প্যানাল আলোচনা সঞ্চালনা করেন।

মূল-প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও মানবিক সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদের আন্তরিকতার ঘাটতির কথাও তুলে ধরেন তিনি।

নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী তাদের দায়বদ্ধতা প্রতিপালন করবে এবং মিয়ানমার সমস্যার সমাধানে অনতিবিলম্বে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে মোমেন আশা প্রকাশ করেন। তিনি সীমিত সম্পদ ও স্থানের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদান নিশ্চিতে সরকারের প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন।

রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, সরেজমিন পর্যাবেক্ষণের পর জাতিসংঘ ও আমাদের অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগিরা ভাসান চরের ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আর এ জন্যই এখন তারা সেখানে তাদের কার্যক্রম শুরু করার কথা বিবেচনা করছে।

আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক সংস্থা ও দেশ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিজ নিজ অবস্থান থেকেই দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানান।

প্যানালিস্টরা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানে বাংলাদেশ সরকারের মানবিক উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তার একটি স্থায়ী সমাধানের ওপর জোর দেন-যা মিয়ানমারেই দায়িত্ব। তারা মিয়ানমারে নির্মম সহিংসতা ও মানবাধিকার লংঘনের শিকার মানুষের ন্যায়-বিচার নিশ্চিতে দায়বদ্ধতা নিরুপণে চলমান জবাবদিহিতা প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে সদস্য রাষ্ট্র, সুশীল সমাজ, শিক্ষক ও অন্যান্য অংশীজনরা অংশ গ্রহণ করেন। বিকেলে মোমেন ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বিলির (পিজিএ)’র সভাপতি ভালকান জোরকির সাথে বৈঠক করেন।

তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়। বাংলাদেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের ওপর আসন্ন পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের আহ্বান করায় পিজিএ-কে ধন্যবাদ জানান।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক গণ-পণ্য হিসেবে আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সকলের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিতে উদ্যোগ নিতে বোজকির প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠেয় আসন্ন ওয়ার্ল্ড পিস কনফারেন্সে অংশ গ্রহণের জন্য পিজিএ সভাপতিকে আমন্ত্রণ জানান।

এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদার মানবিক ভূমিকা গ্রহণ করায় বোজকির বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতার জন্যও তিনি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। পরে, মোমেন ওএইচআরএলএলএস এর উচ্চ-প্রতিনিধি ও আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল উতোইকামানুর সাথে বৈঠক করেন।

তাদের মধ্যে এলডিসিএস এর টেকসই ও অপরিবর্তনশীল উত্তরণসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠেয় এলডিসি-৫ সম্মেলনের প্রারম্ভিক কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে সকল অংশীদারদের সাথে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত