দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্কার দাবি

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২১, ১৮:৩৪

সাহস ডেস্ক

সংসদের অধিবেশনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। এ সময় তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংস্কার দাবি করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ে কর্তৃত্ব নেই বলে অভিযোগ তোলেন তারা।

সোমবার (৭ জুন) সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের মঞ্জুরি দাবির ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তারা এ সমালোচনা ও দাবি করেন।

তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তারা ভালো করছেন। বাংলাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে খুবই সফলতা দেখিয়েছেন।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, কেনাকাটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। কীভাবে এ মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করবেন, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কথা বলতে বলতে তিনি বেহাল হয়ে গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। বেহাল দশা থেকে রক্ষা করতে কমিটি গঠন করতে হবে। ঢাকায় এক পদে ৫০ জন চিকিৎসক, আর জেলা-উপজেলায় চিকিৎসক নেই। লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছে। লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে পারলে এটা রোধ করা যাবে।

তিনি বলেন, কবে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হবে সেটা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। প্রয়োজনে টিকা আনা বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। কিন্তু সজাগ থাকতে হবে যেন দুর্নীতি না হয়। বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার কোম্পানি টিকা এনেছে। ভারত কেন চুক্তির বরখেলাপ করলো? ২০ লাখ মানুষ একডোজ টিকা পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। তাদের আরেক ডোজের কী হবে ঠিক নেই।

বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অবহেলার মাশুল দিতে হচ্ছে। জিডিপির অন্তত পাঁচ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে বরাদ্দ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। করোনাকালে ভারত স্বাস্থ্য খাতে আগের বছরের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশে বেড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। করোনাকালেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। আবার যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাও ব্যবহার হয়নি।

তিনি বলেন, ১০ মাসে স্বাস্থ্যখাতে এডিপির মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এখন আবার নতুন বরাদ্দ চাইছে। কেন ৭৫ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে তার জবাব স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে।

রুমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার জেলায় জেলায় আইসিইউ স্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু দেড় বছরে মাত্র পাঁচটি জেলায় নতুন আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। এখনো ৪৫টি জেলায় আইসিইউ নেই। এমপি-মন্ত্রী, ব্যবসায়ীরা অনেকে মনে করতেন সর্দি-কাশি হলেও দেশে চিকিৎসা নিতে হবে না। করোনা দেখিয়েছে দেশে চিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আফজাল-মালেকরা অনিয়ম করছে রূপকথার গল্পের মতো। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এখন কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু তাদের থামানো যাচ্ছে না। এখানে অনেক মালেক, আফজালের ছড়াছড়ি। একজন মহিলা উপ-সচিবের কানাডাসহ তিনটা দেশে বাড়ি আছে।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার সমালোচনা করে রওশন আরা মান্নান প্রশ্ন রাখেন, একজন নারী সাংবাদিক অন্যায় করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে দেওয়া হলো না কেন? কেন তাকে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো? আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হলো, নিজেরা কেন অত্যাচার করলো, দেশবাসী এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা করছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আপনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। আপনার বাবা আমার সঙ্গে মন্ত্রী ছিলেন। আপনাকে আমি চিনি। অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে আপনি। কিন্তু আপনার তো কর্তৃত্ব নেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যা হচ্ছে।

কাজী ফিরোজ বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। এখন দরকার অক্সিজেন। সেটা না এনে আনা হচ্ছে এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিন। পাঠানো হচ্ছে  উপজেলায়। তারা সব সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। চালাতে পারে না। লক্ষ কোটি টাকা যাচ্ছে। কিন্তু জনগণ সেবা পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, চুরি-ডাকাতি করলে একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা যায়। কিন্তু আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হলো, এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাকে (রোজিনা ইসলাম) ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হলো। তাকে টয়লেটে যেতে দেননি। অসুস্থ মানুষ, তাও মহিলা। তাকে এভাবে হেনস্তা করা যায়? এটা নিয়ে জাতিসংঘ, সারা পৃথিবী কথা বললো। আমাদের মুখটা কোথায় গেলো? নিজেদের দুর্বলতা নিজেদের ঢাকতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত