সাংবাদিক রোজিনার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ'

প্রকাশ | ২০ মে ২০২১, ১৮:১৩ | আপডেট: ২০ মে ২০২১, ১৮:২১

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ ও সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে’র বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

২০ মে (বৃহঃস্পতিবার) দুপুর ১২টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন , ঢাকা মহানগর সদস্য সালমান রাহাতের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ক্ষেত মজুর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতুসহ প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ বলেন, দিন যত গড়াচ্ছে দেশে করোনা সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুর মিছিল ততই বাড়ছে। বর্তমানে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার গাফিলতি, দূর্নীতি ও লুটপাট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছে মানুষ। চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায়ই মৃত্যুবরণ করছে। প্রতিনিয়তই পিতার কোলে সন্তানের লাশ, সন্তানের কাঁধে অভিভাবকের লাশ দেখতে পাচ্ছি। যা বর্তমানের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তা দেখার সময় কি কর্তৃপক্ষের আছে? 

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যে যেভাবে পারছে স্বাস্থ্য খাতের সরকারি বরাদ্দ লুটেপুটে খাওয়ার ধান্ধায় আছে। হাসপাতালের পরিচালক ও ডাক্তারদের দলবাজি, কমিশন বাণিজ্য এবং দুর্নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। সরকারি হাসপাতাল গুলোতে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, ওষুধ ও সুযোগ-সুবিধার সুষ্ঠু ব্যবহার করতে নিয়মিত, কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ক্ষেত মজুর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ ফজলুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরে বদলি বাণিজ্য রমরমা আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কর্ণধার হলেও তা পরিণত হয়েছে বদলি বাণিজ্যের মূল আখড়ায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কতিপয় কর্মকর্তা ও একজন আলোচিত ঠিকাদারের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট নিয়োগ-বদলি এবং কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে তারা কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অব্যবস্থাপনায় দেশের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা কাটছে না।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু বলেন,‘পেশাগত দায়িত্ব পালনে রোজিনা ইসলাম সচিবালয়ে গেলে তাকে আটকে রেখে হেনস্থা করা হয়, তার মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে রোজিনা ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে না নিয়ে থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। একটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যা অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। রোজিনা ইসলাম করোনাকালীন স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট করেছেন। দেশের মানুষের সামনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হোমড়াচোমরাদের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছেন। সেই কারণেই তাকে এই আক্রোশের মুখে পড়তে হয়েছে। অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের মুক্তি দিতে হবে। একইসাথে তাকে হেনস্থার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। 

তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ আমলা-কর্মকর্তা ও তাবেদারি নেতা কর্মীদের বহাল তবিয়তে রেখে কর্মহীন করা হচ্ছে মেহনতি শ্রমিকদের। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নানা লুটপাট ও চরম ব্যর্থতার চিত্র উন্মোচিত হয়ে গেছে। এই সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থের চেয়ে ব্যবসায়ী ধনীক শ্রেণির স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য খাতে দূর্নীতি লুটপাট বন্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রী- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অপসারণ, স্বাস্হ্য মন্ত্রণালয়ের লুটপাট সিন্ডিকেটের হোতাদের গ্রেপ্তার এবং সকলের জন্য বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করে জনবান্ধন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং দূর্নীতিবাজ আমলা-কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

এছাড়াও সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের সংগঠক আকরামুল হক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম জুয়েল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধক্ষ্য শামীম হোসেন, স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক প্রিতম ফকিরসহ প্রমুখ।