আমি রাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই: ঝর্ণা

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৫৪

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা (২৭)। মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী দাবি করেন, বিয়ের প্রলোভনে দেখাইয়া আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেন মামুনুল।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলটি দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী জান্নাত আরা ঝর্ণা বলেন, ২০০৫ সালে আমার স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। মামুনুলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমাদের ঘরে দুই সন্তান (একজনের বয়স ১৭, অপরজনের ১৩) ছিল। আমার স্বামীর ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ার সুবাদে আমাদের বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। পরিচয়ের শুরু থেকেই আমার ওপর তার (মামুনুল হক) এর দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। যার ফলে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুকৌশলে প্রবেশ করে মামুনুল হক শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। মামুনুল হকের কুমন্ত্রণায় আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে উঠে।

তিনি বলেন, সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে ২০১৮ সালে ১৮ আগস্ট মামনুলের পরামর্শে আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর আমি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে সু-কৌশলে ঢাকায় যাওয়ার জন্য আমাকে প্ররোচিত করে। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে সরল বিশ্বাসে তার সাথে ঢাকা চলে যাই। ঢাকা যাওয়ার পর শুরুতে সে তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় আমাকে রাখে এবং নানাভাবে আকার ইঙ্গিতে আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।

জান্নাত বলেন, এক পর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এরই ধারাবাহিকতায় তার পরামর্শে আমি উত্তর ধানমন্ডির কলাবাগানে ২৩/৩ নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় সাবলেট হিসেবে ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকি। পাশাপাশি তার ঠিক করে দেওয়া একটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি। আমার বাসা ভাড়া ও আনুসাঙ্গিক খরচ দিত সে। এক পর্যায়ে সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। গত ২ বছর যাবৎ বিভিন্ন সময় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী  বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে নিয়ে গিয়ে তার পরিচিত হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রিয়াপন ও বিবাহের আশ্বাসে যৌন লালসা চরিতার্থ করে। এক পর্যায়ে আমি বিবাহের কথা বললে সে আমাকে বিবাহ করছি, করব বলে নানা অযুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে।

জান্নাত আরা ঝর্ণা বলেন, বড় ধরনের প্রতারণনার শিকার হয়েছি আমি। আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে তিনি (মামুনুল হক) আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন। অনেক দিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে গেছেন। আমি রাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।

আটকাবস্থা থেকে উদ্ধারের ঘটনা জানিয়ে জান্নাত আরা বলেন, এক পর্যায়ে আমি সুকৌশলে আমার বড় ছেলেকে আমার দুরাবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে গত ২৭ এপ্রিল ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, গত ২৬ এপ্রিল আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকের উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ সময়  পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। কিন্তু মামনুল হকের অনুসারীদের হুমকি ও ভয়ভীতি এবং আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত