জামায়াত ও হেফাজত একই সূত্রে গাঁথা: আ.লীগ

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২১, ০২:৩৭

সাহস ডেস্ক

কেন্দ্রীয় ১৪ দল আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তরা বলেছেন, বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত একই সূত্রে গাঁথা। এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দমনে কোনো আপোষ নয়। ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তরা এ সব কথা বলেন।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, নীতির প্রশ্নে শক্তভাবে দাঁড়ালে ২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডবের পরই হেফাজত প্রশ্নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আমরা যদি নীতির প্রশ্নে শক্তভাবে দাঁড়াই, যদি আমরা শক্ত থাকি তাহলে কোনও অশুভ শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের যে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছিল, তখন থেকেই আমাদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীর তাণ্ডবের ঘটনায় আমির আমির বাবুনগরী দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে তোফায়েল আহমেদ উল্লেখ করেন।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, রাষ্ট্র এবং সংবিধানের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা অদৃশ্য কোনও শত্রু নয়। তারা দৃশ্যমান সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত ইসলাম এবং বিএনপি।

বিএনপি-জামাত-হেফাজত একই সূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে ইনু বলেন, জঙ্গি, হেফাজত, জামাত-বিএনপিকে পক্ষে রাখার কৌশলটা ভ্রান্ত কৌশল। এই কৌশল পরিত্যাগ করতে হবে। বিএনপির সঙ্গে হেফাজত-জামায়াত, জঙ্গিদের আলাদা করার কৌশল আমাদের পরিহার করতে হবে। বিএনপিকে জামায়াত এবং হেফাজতের থেকে আলাদা করার প্রয়োজন মনে করি না। দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষে লাভ নেই। সাপ ছোবল মারবেই। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা এবং মুজিবনগর সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে চার মুল নীতির ওপরে শক্ত ভাবে দাঁড়াতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ইনু বলেন, একটু সাম্প্রদায়িকতা, একটু ধর্ম, একটু খাতির করা এরকম নীতির দিকে যাওয়া উচিত নয়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বাংলাদেশের কোনও মসজিদ রাজনৈতিক মিটিং মিছিলের কেন্দ্রস্থল হবে না। সরকারকে বলবো এ ব্যাপারে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিবেন। সকল মাদ্রাসাকে নজরদারিতে আনতে হবে। পাঠ্যপুস্তক রিভিউ করে সাম্প্রদায়িকতার যত ছাপ রয়েছে তা দূর করতে হবে। এই ধাক্কাতে ওদের দমন করতে হবে। ধ্বংস করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, হেফাজত ইস্যুতে সরকার সঠিক পথে সঠিকভাবেই এগোচ্ছে। এ বিষয়টি তিনি ১৪ দলের সকলকে সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল, আর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকারের অধীনেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের যে হাই কমান্ডকে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন তাদের নিয়ে গঠন করা হয় মুজিবনগর সরকার। আর এই সরকারের অধীনেই কাজ করেছেন সকল সেক্টর ও সাবসেক্টর কমান্ডারসহ বিভিন্ন ফোর্স। আজ যে যত কথাই বলুক না কেন এরা সবাই ছিলেন মুজিবনগর সরকারের বেতনভুক্ত।

আমির হোসেন আমু বলেন, আজকে পত্র পত্রিকার আলোচনায় অনেকেই বলেছেন মুক্তিযুদ্ধে অনেকের আবদান ছিল, সহযোগিতা ছিল, এদেশের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল, তাদের বক্তব্য সব ঠিক কিন্তু এই অবদান, সহযোগিতা কার নেতৃত্বে, কার আহবানে হয়েছিল তারা সেই সত্যকে গোপন করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার এই অপপ্রয়াস কখনো সফল হবে না।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, নীতির প্রশ্নে শক্তভাবে দাঁড়ালে কোনো অশুভ শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। ২০১৩ সালের ৫ মে তান্ডবের পরই হেফাজত প্রশ্নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক, চেতনাবোধ ও দেশপ্রেম সঠিকভাবে জাতীয় জীবনে প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত একই সূত্রে গাঁথা। সা¤প্রদায়িক অপশক্তি দমনে কোনো আপোষ নয়। দুধ দিয়ে সাপ পুষলে তার ফল কখনও শুভ হয় না।

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাসের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি -জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম , তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজ ভান্ডারী, গণ আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা: শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত