বলাৎকারী, দখলদার, জামাতপন্থী ও ধর্মীয় উস্কানীদাতা মামুনুলের আমলনামা

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৪৭

সাহস ডেস্ক

আজ রবিবার (১৮ এপ্রিল) হেফাজতে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হককে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি গ্রেপ্তার করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে বায়তুল মোকারমে বিক্ষোভ, সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার রেশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। এরপরই হরতালের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম। ২৬ থেকে ২৮ মার্চ- এই চার দিনের সহিংসতায় দেশে ১৭ জনের মৃত্যুর হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে।

সারাদেশে ধর্মভীরু মানুষের সাথে মামুনুল হকদের ধর্মীয় উসকানী থেকে বাদ যায়নি শিশুরাও। হরতালে মাদ্রাসার শিশুদের কার্যক্রমও ছিলো চোখে পড়ার মতো। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সারাদেশে আতঙ্ক বিরাজ করে মামুনুল হক শনিবার (৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়াল রিসোর্টে অবরুদ্ধ হন তালাক প্রাপ্ত এক নারীর সাথে। যদিও মামুনুল ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন, কিন্তু পরবর্তী সময়ে কিছু কল রেকর্ডিং থেকে জানা-বুঝা যায় উক্ত নারী তার স্ত্রী নন। যদিও পরবর্তীতে "মানবিক বিয়ে" নামে এক গল্পের প্রবর্তণ করেন হেফাজতের এই নেতা।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর তাণ্ডবের ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 

গতবছর নভেম্বর নাগাদ আখেরাতের ভয় দেখিয়ে ১১ বছর বয়সী এক ছাত্রকে টানা ১৫ দিন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বলাৎকার করে মমিনুল। বলাৎকারের শিকার ১১ বছরের মাদ্রাসা ছাত্রের পরিবার জানায়, ১৫ দিন ধরে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ওই মাদ্রাসার মুফতি মামুনুল হক ছাত্রটিকে বলাৎকার করে আসছে। ব্যথা কমাতে ছাত্রটিকে ব্যথানাশক ওষুধও সেবন করাতেন ওই হেফাজত নেতা। ছাত্রটি মাদ্রাসা থেকে বাসায় চলে যেতে চাইলে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতো এবং এইসব কাউকে জানালে দোযখে চলে যাবে বলে আখেরাতের ভয় দেখাত। শেষবার শিশুটি বলাৎকারের শিকার হয় গত ৩ নভেম্বর রাত দেড়টার দিকে। পরে সুযোগ পেয়ে ওই শিশু ছাত্র মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাসায় গিয়ে অভিভাবকদের বিষয়টি জানালে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

হেফাজত এই নেতা মুফতি মামুনুল হক ২০০৩ সালেও বলাৎকারের অভিযোগে ১৫ দিন কারাবরণ করেছিলেন।

উল্লেখযোগ্য হেফাজত নেতা মামুনুলের পিতা মৃত আজিজুল হকের বিরুদ্ধেও একাধিক ধর্ষণের অভিযোগ ছিল এবং ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকার ধর্ষণের অভিযোগে মাওলানা আজিজুল হককে ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রধান করে।

গতবছর ১৭ ডিসেম্বর কুমিল্লার চান্দিনা থানায় ‘বিনা দাওয়াতে’ কুমিল্লায় একটি মাহফিলে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ‌"দাওয়াত ছাড়া মাহফিলে গিয়ে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করে, দেশের মধ্যে একটি অরাজকতা তৈরি করতেই বিএনপি-জামায়াতের মদদে মামুনুল হক এসব করছেন।"

এছাড়াও মাদ্রাসা দখলের অভিযোগও রয়েছে মামুনুলের বিরুদ্ধে। মোহাম্মদপুর এলাকার জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা দীর্ঘদিন ধরেই মাদ্রাসার মোতওয়াল্লীসহ মালিকগণের মামলা ও দাবির প্রেক্ষিতে ওয়াকফ্ প্রশাসন অবৈধ দখলদারকে স্থান ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ জারি করে। কিন্তু মামুনুল হক গং উক্ত মাদ্রাসাটিতে জোর করেই দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং অন্যান্য মাদ্রাসা দখলের সূক্ষ পায়ঁতারাও করেছে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন মামুনুল হক। কথিত আছে যে, বর্তমান কমিটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব নূর হোসেন কাসেমীকে ব্যবহার করে তিনি অনেক বয়োজ্যৈষ্ঠ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত হেফাজত নেতাদের ডিঙ্গিয়ে এ পদটি বাগিয়ে নেন। এ নিয়ে অনেক হেফাজত নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এছাড়াও, নিজ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বাবুনগরী ও কাসেমীকে ব্যবহার করছেন। বাবুনগরী ও কাসেমীকে সামনে রেখে হেফাজতের ব্যানারে বিভিন্ন জেলায় বিচরণ করলেও তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে হেফাজতের শক্তিশালী নেতা হিসেবে জাহির করা।

আজিজুল হকের বড় ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক বেফাকের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশ এর মহাসচিব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। যে পদে বর্তমানে মামুনুল হক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। জনশ্রুতি রয়েছে যে, দলের মহাসচিবের পদটি দখল করতে তার ভাইকে শর্তানুযায়ী দলীয় পদ ছেড়ে বেফাকের মহাসচিব পদে বসাতে কলকাঠি নাড়েন। মাহফুজুল হক সাম্প্রদায়িক এবং ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে নিরব ভূমিকা রাখলেও মামুনুল হক যেন ঠিক তার উল্টোটি।

মাওলানা মামুনুল হক সুকৌশলে জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতের সাথে হেফাজতের একটি সেতুবন্ধন তৈরির প্রচেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয়, বর্তমান সময়ে হেফাজতে ইসলামের সাথে জামায়ত-শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে হেফজতে ইসলামকে জামায়াতের ছত্রছায়ায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। মামুনুল হকের স্ত্রী একসময় শিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিল। শুধু তাই নয়, তার শ্বশুরকুলের আত্মীয় স্বজনদের অনেকেই এখনো জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

যার উদাহরণ আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর জানাজার দিন লক্ষাধিক অনুসারীর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কৌশলী উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। জানাজার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া, আহমদ শফীর লাশ বহনকারী খাটিয়া জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমান এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি, শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল আলিমসহ আনুমানিক ৩০/৪০ জন বেষ্টন করে রাখে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত