শরীয়তপুরে শয়তানের ধোকায় মহিলা মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ, মুফতি গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৪৩

সাহস ডেস্ক

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মহিলা কওমি মাদ্রাসায় মুফতির লালসার শিকার হয়েছেন ৯ বছরের এক শিশু শিক্ষার্থী। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসার ওই শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আজিজ শেখের ছেলে মুফতি আমির হামজার বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয় সমাজপতিরা নির্যাতিত মেয়েটির পরিবারকে জিম্মি করে তার সম্ভ্রমের দাম হিসেবে তিন লাখ টাকা দিয়ে বিয়ষটি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। পরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মুফতি আমির হামজাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত ১৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের (মাঝিরঘাট সংলগ্ন) মাঝির চরের বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনার মাত্র ৭ দিন আগেই পার্শ্ববর্তী পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি মহিলা কওমী মাদ্রাসার ৮ বছরের এক শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ওই মাদ্রাসার হেড ক্লার্ক আব্দুল হান্নান। এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামী করে জাজিরা থানায় মামলা হয়েছিল। ৭ দিন না পেরুতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো মাত্র ২ কিলোমিটার দুরে পাইনপাড়া চরের আরেক মহিলা কওমী মাদ্রাসায়।

ঘটনার তিনদিন পর সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৭টা থেকে ৭.৩০ মিনিট এর মধ্যে বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমির হামজা মাদ্রাসারই ৯ বছর বয়সী নাজেরানা বিভাগের এক শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। ভূক্তভোগীর পরিবার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চাইলে স্থানীয় মাতুব্বররা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে রাখেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমাজপতি মাতুব্বররা এলাকায় ১৫ এপ্রিল বিকেলে সালিশ দরবার করে অধ্যক্ষ আমির হামজাকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা ও দশ ঘা জুতাপেটা করেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য নির্যাতিতার বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মা জানান, মেয়ে বাড়ি নাই। আমাদের তো এলাকায় থাকতে হবে। বিষয়টি এলাকার পাঁচজন মিটমাট করে দিয়েছে। আমি ওর বাবার সাথে কথা না বলে আপনাদের কিছু বলতে পারব না। যে মিটমাট হয়েছে তাতে আপনারা কি বিচার পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি নির্বাক ছিলেন। তবে তার দুলাভাই জানান, ঘটনা সত্য। আপনাদেরও মা বোন আছে, বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকেন।

ভূক্তভোগীর পাশের বাড়ির নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আপনারা আসছেন, মাতুব্বররা গত বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) এলাকায় দরবার সালিশ করে বিষয়টি মিটমাট করে দিয়েছেন। তারা নদীর (মঙ্গল মাঝির ঘাট) ওপার আছেন, সেখানে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেন।

পরে বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায় মাদ্রসাটির প্রধান ফটকে তালা মারা, জানা যায় এলাকার মাতুব্বররা ছয় মাসের জন্য মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দিয়েছেন।

অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আমির হামজার বাড়ি গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বড় ভাই মনির হোসেন জানান, শয়তানের ধোকায় পড়ে ভাই একটি কাজ করে ফেলছে, এলাকার মাতুব্বররা দরবার সালিশ করে বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছেন। লজ্জায় আমরা চোখ তুলে তাকাতে পারিনা। আমির হামজা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই এলাকায় নাই, তিনি ভালো (মানসিকভাবে) হলে আবার ফিরে আসবেন।

পরে মাঝিরঘাট এসে পাওয়া যায় ওই সালিশ বোর্ডের সভাপতি ওহাব মাঝি ও রোকন মাঝিকে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা জানান, একটি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটছে, কিন্তু ধর্ষণ হয়নি। আমরা এলাকার প্রায় চার-পাঁচ’শ মানুষের সামনে গ্রামের মাতুব্বর কালু মাঝি, রাজ্জাক মাঝি, বাচ্চু মাদবর, মোকলেছ মাদবর, লতিফ বেপারী, প্যানেল চেয়ারম্যান আজহার মোড়লসহ স্থানীয়রা মিলে একটি সালিশ দরবার বসাই। এই দরবারে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রথমে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আমির হামজাকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে পঞ্চাশ হাজার টাকা মওকুফ করে বাকি তিন লক্ষ টাকা নির্যাতিতার ভবিষ্যতের জন্য তার পরিবারের হাতে দেওয়া হয়। তবে জুতা পেটার ঘটনা ঘটেনি, আমির হামজার ভাই দুলাল উত্তেজিত হয়ে সকলের সামনে তাকে জুতাপেটা করেছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাল চাঁন মাদবর বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, আমারও যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু অন্য একটি দরবার থাকায় আমি যেতে পারিনি, তবে আমি প্যানেল চেয়ারম্যান আজহার মোড়লকে পাঠিয়েছি। ধর্ষণের মতো একটি গুরুতর অপরাধের বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় মুরুব্বীরা প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেমনে করছে আমি জানি না। আমি জেনে আপনাকে জানাব।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মিন্টু মন্ডল বলেন, বিভিন্ন সংবাদ কর্মীদের কাছ থেকেই প্রথম জেনেছি। জানার পর আমি রাতে প্রায় ১টার দিকে অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত আমির হামজাকে গ্রেপ্তার করেছি। আসামি ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছেন। নির্যাতিতাকে মেডিকল পরীক্ষার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এঘটনায় নির্যাতিত শিশুটির জবানবন্দির ভিত্তিতে জাজিরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/১/৩০ ধারায় মামালা দায়ের করেন ধর্ষিতার পিতা। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির স্বাস্থ পরীক্ষার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত