এলপিজি: সিলিন্ডার গ্যাসের নির্ধারিত দাম কীভাবে কার্যকর করবে সরকার?

প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১৮:১৪

বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক সংস্থা প্রথমবারের মত এলপিজি দাম নির্ধারণ করলেও ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়ায় এখনো তারা আগের দামেই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন।

এদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন নির্ধারিত দাম নিয়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে তারা প্রচারণা শুরু করবেন।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) রোববার ভোক্তা পর্যায়ে সরকারি এলপি গ্যাসের প্রতি ১২.৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করেছে ৫৯১ টাকা।

আর বেসরকারি সমান আয়তনের অর্থাৎ ১২.৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করেছে ৯৭৫ টাকা।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল জলিল বিবিসিকে বলেন, ১২ই এপ্রিল থেকেই এই আদেশ কার্যকর হয়েছে।

তবে রামপুরার একজন ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার এক হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি বলছিলেন "আমার কাছে এখনো অফিসিয়াল কোন নির্দেশ আসেনি। তাই আগে যে দামে বিক্রি করতাম আজকেও সেই দামেই বিক্রি করছি"।

সরকারি-বেসরকারি সিলিন্ডারের দাম ভোক্তা পর্যায়ে কার্যকর হবে কীভাবে

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে এ গ্যাসের দাম নিয়ে একরকম অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে।

বেসরকারি কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার একেক স্থানে একেক রকম দাম বিক্রয় করা হয়। আবার সরকারের যে সিলিন্ডার সেটা প্রায় দুষ্প্রাপ্য।

এমন প্রেক্ষাপটে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণের জন্য একটি রিট আবেদন করেছিল।

এই রিটের শুনানি শেষে আদালত বিইআরসিকে গণশুনানি করে এলপিজির দাম নির্ধারণের আদেশ দেয়।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৪ই জানুয়ারি এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণের জন্য বিক্রয়কারী কোম্পানিগুলোর দাম নিয়ে গণশুনানি করে বিইআরসি।

এখন যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা ভোক্তা পর্যায়ে এই দামেই যাতে তারা কিনতে পারেন সেজন্য কর্তৃপক্ষ সচেতন আছেন বলে জানাচ্ছে বিইআরসি।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল জলিল বলেন, এলপিজি মজুতকরণ ও বোতলজাতকরণের যাদের অনুমোদন রয়েছে তারা এলপিজি ব্যবহারের সতর্কতার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করবে।

"এ লক্ষ্যে এলপিজি মজুতকরণ ও বোতলজাতকরণ লাইসেন্সীসমূহ সংশ্লিষ্ট সকল ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলারদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নিবে বিইআরসি" বলেন মি. জলিল।

তিনি বলেন "দাম নির্ধারণের কাজ বিইআরসি'রঅ সেটা তারা করেছে। যদি কেউ সেটা না মানে তাহলে বিইআরসির আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিইআরসি একটা রেগুলেটরি বডি, নানা প্রশাসনিক বডি রয়েছে যারা নিয়ম ভাঙ্গা হচ্ছে কিনা সেটা দেখবে"

বিইআরসি'র একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, এলপিজির ব্যবহার, এর দাম সংক্রান্ত বিষয় মিডিয়াতে প্রচার করা হবে, রিটেইল পয়েন্টে পোষ্টার রাখা হবে, এবং লিফলেট বিতরণ করে গ্রাহকদের সচেতন করা হবে।

এরপরে গ্রাহকরা যদি মনে করেন তাদের কাছে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে, তাহলে ভোক্তা অধিকার আইনে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।

এদিকে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসিকে জানান, নির্ধারিত দাম সঠিক ভাবে মানা হচ্ছে কিনা সেটার জন্য বাজার মনিটর করা হবে।

তিনি বলেন " এখন লকডাউন চলছে, তাছাড়া আরেকটু সময় আমাদের অপেক্ষা করতে হবে বাজার মনিটর করার জন্য। যদি কোন অনিয়ম হয় তাহলে সরাসরি গ্রাহক মন্ত্রণালয়ে জানাতে পারবেন"।

তিনি বলেন, "দাম সঠিকভাবে মানার জন্য ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে একটা গাইডলাইন করা যেতে পারে"।

কীভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে?
বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস (সিপি) অনুযায়ী দেশে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারিত হয়।

সেই সঙ্গে এলসি মার্জিন, জাহাজ ভাড়া, পরিবহন ব্যয়, ডিলারের লভ্যাংশ, উদ্যোক্তার মুনাফা বিবেচনায় নিয়ে বাজার দর নির্ধারণ করা হয়।

তবে বিইআরসি বলছে, চলতি মাসের দাম মার্চ মাসের দাম অনুসারে নির্ধারণ করা হয়েছে।

মি. জলিল বলেন " এখন এপ্রিল মাস চলছে কিন্তু যে দাম আমরা নির্ধারণ করেছি সেটা সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইসের মার্চ মাসের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়েছে। আমরা এক মাস পিছিয়ে থাকবো এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে"।

তবে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিমাসেই এই দাম পরিবর্তিত হতে পারে বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত