রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য ডি-৮ নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ০১:২৭

সাহস ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যুবসমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধিও জন্য ডি৮ নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

“আমি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের জন্য আপনাদের (ডি৮ নেতাদের) প্রতি আহবান জানাচ্ছি” এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যদি সংকটের অবসান না হয়, এটি এই অঞ্চল এবং এর বাইরেও নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠতে পারে।” তিনি রোহিঙ্গা সংকটকে বাংলাদেশের জন্য জরুরি ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ কারণে দেশের পরিবেশ, সমাজ এবং অর্থনীতির ওপর গুরুতর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ১০ম ডি৮ সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।

দেশ যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে এমন একটি অনন্য সময়ে বাংলাদেশের উদ্যোগে এবং সভাপতিত্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।

তিনি বলেন, মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় দিয়েছে তবে শুরু থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে তাদের (রোহিঙ্গাদের) নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বতস্ফুর্তভাবে এবং টেকসই ব্যবস্থায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের তিন বছরের বেশী পরেও এখন পর্যন্ত প্রতাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারেনি।

দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ তুরস্কের কাছ থেকে ডি ৮ এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন করেছে, ১৯৯৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ডি৮ এর দ্বিতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

সম্মেলনে শেখ হাসিনা জলবায়ূ পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজনে ডি ৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা জন্য নেতাদের প্রতি আহবান জানান।

তিনি বলেন, “ডি ৮ এর মধ্যে কার্যকর ও টেকসই উন্নয়ন এখন অপরিহার্য যাতে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে একে অপরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে পারি।” বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও তাঁর দেশ অসাধারণ আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, কোভিড ১৯ মহামারি ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত বছর বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় জিডিপি’র ১শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান অবস্থার যদি পরিবর্তন না হয় আসছে দশকগুলোতে এই ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিভিসি’র সভাপতি হিসেবে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন ইস্যুতে ডি ৮ ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পারা বাংলাদেশের জন্য আনন্দদায়ক হবে।

ডি৮ ১০ম সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বৈশ্বিক রূপান্তরের জন্য অংশীদারিত: যুব সম্প্রদায় ও প্রযুক্তি শক্তির মুক্তি’।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইস্তাম্বুুলে অনুষ্ঠিত প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী ডি-৮-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শেখ হাসিনাও পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন। এগুলো হল- দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যুবকদের শক্তিকে কাজে লাগানো, আইসিটি’র সম্পূর্ণ সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার, প্রয়োজনীয় আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং পরিকাঠামোগত রূপরেখা তৈরি করণ, এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুবিধার্থে সংযোগ উন্নত করা।

ব্যবসায়িক ধারণা, মডেল তৈরি, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জনকারী যুবকদের ক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে যুক্ত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ডি-৮ দেশের যুবকদের ব্যক্তিগত এবং এমনকি সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে একত্রিত হতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, ডি-৮ বিজনেস ফোরাম ১ম ডি-৮ যুব শীর্ষ সম্মেলনের সঙ্গে মিলে এই বিরল সুযোগ তৈরি করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে রূপান্তরকারী প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে। এর ফলে দেশটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ পরিণত হয়েছে। ছয় লাখেরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী, ২৮টি উচ্চ হাই-টেক পার্ক ও প্রযুক্তি বান্ধব উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ যুব ও প্রযুক্তির শক্তি ব্যবহার করে সর্বোত্তমভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রও উল্লেখ করেন যেখানে সদস্য দেশগুলোকে বাণিজ্যের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তিনি বলেন, ডি-৮ সচিবালয় গ্রুপের মধ্যে সম্ভাবনার তথ্য সরবরাহ করতে পারে এবং ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ’ সহযোগিতা চুক্তির সুযোগ অন্বেষণ করতে পারে। তিনি অভিমত প্রকাশ করেন, এই ধরনের তথ্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংলাপ বাড়াতে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আরও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। বাণিজ্য শেষ পর্যন্ত বেসরকারী খাত দ্বারা চালিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন ব্যবসায়ীদের ভ্রমণের সুবিধা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ তাই ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা পদ্ধতির সরলীকরণ অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ছয় ডি-৮ সদস্যের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।

ডি-৮ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন, যা উন্নয়নশীল-৮ নামেও পরিচিত, ৮টি উন্নয়নশীল মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং তুরস্ক নিয়ে গঠিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সর্বস্তরে শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করছে।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এসইএসিও বিশ্ববিদ্যালয় নেটওয়ার্ক ৪ আইআরসহ নতুন এবং গতানুগতিক বিষয়ের জন্য একটি ভাল প্ল্যাটফর্ম এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্থিতিশীল অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।

তিনি বলেন, এবারের শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়বস্তু বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক কারণ দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত এই যুবকরা কোভিড-১৯ মহামারীর সময় আমাদের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রেখেছে। চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে তিনি প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কার্যকর অংশীদারিত্ব এবং বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর জোর দেন।

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রথম ওয়েভে তার বিস্তার হ্রাস করতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী সংক্ষেপে তুলে ধরেন।

১ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়ন টাকার একটি উদ্দীপনা প্যাকেজ যা জিডিপির প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ চালু করা ছাড়াও তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি এবং পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা জালগুলোতে বিনিয়োগেও কোভিড-১৯ এর প্রভাব অবদমিত রাখতে অবদান রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার ৯৫ লাখেও বেশি মানুষকে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা প্রদান করছে এবং তিনি দেশের প্রতিটি গৃহহীন ব্যক্তিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বাড়ি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত