অভিযোগ প্রমাণিত হলে গ্রেপ্তার হবেন মামুনুল

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৬:১৭

অনলাইন ডেস্ক

২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজাহারে এক নম্বর ও হুকুমের আসামি করা হয়েছে মামুনুল হককে।

সোমবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টন থানায় আরিফুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৮।

মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেছেন, আমরা তদন্ত করব। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের অনেকের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। তবে আমরা কোনো পদ বিবেচনায় নেব না। আমরা অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। মামলাটি গতকাল রাতে হয়েছে। এখনও প্রি-ম্যাচুরড রয়েছে।

ডিসি আরও বলেন, আমরা আসামিদের প্রকৃত পরিচয়, তারা বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছে, ২৬ তারিখ তারা কোথায় ছিল, বায়তুল মোকাররমে সরাসরি উপস্থিত ছিল কি-না, তারা নাশকতার নির্দেশ-উসকানি দিয়েছে কি-না, হামলার অর্থদাতা বা মাস্টারমাইন্ড কি-না তা শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নামাজের পর মসজিদের বেদীর ওপরে অনেকে কথা বলছিল, সেখান থেকেই সংঘর্ষের শুরু। তবে সেখানে কোনো সিনিয়র নেতাকে দেখিনি। অনেকে ভেতরে ছিল, সিনিয়র নেতারা ভেতরে ছিল কি-না তা তদন্তে উঠে আসবে।

মামলার এজাহারে বাদী আরিফ-উজ-জামান বলেন, গত ২৬ মার্চ শুক্রবার বেলা সাড়ে বারোটার দিকে আমি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাই। ফরজ নামাজ শেষে মসজিদের ভেতর কিছু উচ্ছৃঙ্খল, ধর্মান্ধ ব্যক্তিকে জুতা প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিতে দেখি। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে বাইরে উত্তর গেটের সিঁড়িতে কয়েক হাজার জামাত-শিবির, বিএনপি, হেফাজতের উগ্র মৌলবাদী ব্যক্তিদের উচ্ছৃঙ্খল জমায়েত দেখতে পাই।

তিনি অভিযোগে আরও বলেন, তাদের স্লোগান ও কথোপকথন থেকে জানতে পারি যে, হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে শীর্ষ স্থানীয় জামায়াত-শিবির, বিএনপি, হেফাজত নেতারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে দেশি-বিদেশি সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মসূচীকে বানচাল করতে ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে।

এজাহারে বলা হয়েছে, তারা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দা, ছোড়া, কুড়াল, কিরিচ, হাতুড়ি, তলোয়ার, বাঁশ, গজারি লাঠি, শাবল ও রিভলভার, পাইপগানসহ অন্যান্য অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাধারণ মুসল্লিদের ওপর হামলা করে।

ব্যবসায়ী আরিফ-উজ-জামান অভিযোগ করেন, হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের নির্দেশে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। পরে সে আমার ডান হাঁটু পিটিয়ে জখম করে। এসময় আমি মাটিতে পরে গেলে মাওলানা লোকমান হাকিম ও নাসির উদ্দিন মনির তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এক পর্যায়ে মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া তার হাতে থাকা ধারালো কিরিচ দিয়ে আমার মাথার পেছনে আঘাত করে। পরে নুরুল ইসলাম জিহাদী বাঁশের লাঠি দিয়ে বাম বাহুতে পেটায়।

এজাহারে বলা হয়, স্থানীয় জনতার শক্ত প্রতিরোধের কারণে হেফাজত নেতাকর্মীরা পিছু হটে এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া তারা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের আশেপাশের দোকানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। আসামিরা বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

মামলায় বাকি আসামিরা হলেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনির, নায়েবে আমির মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাখজান মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া নায়েবে আমির মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসিম উদ্দিন, টঙ্গীর সহ-সাংগঠনিক মাওলানা মাসুদুল করিম, অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, সহকারী দাওয়া সম্পাদক মাওলানা মুশতাকুন্নবী, ছাত্র ও যুব সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের ও দফতর সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব।