সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২১, ১৪:৪৬

সাহস ডেস্ক

করোনাভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে এ জন্য জনসমাগম এড়াতে এবং সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি বলে বোধহয় মানুষের মাঝে একটি বিশ্বাস জেগে গেছে। যার জন্য সকলেই ভাবছিল কিছু হয়তো হবে না। আমি বারবার বলেছিলাম ভ্যাকসিন নিলেও সাবধানে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে আনা শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা করোনা সংক্রমণ নতুন করে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে দেশবাসীর কাছে এ অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস আমরা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছিলাম। সবার মনে হচ্ছিল সবকিছু যেন ঠিক হয়ে গেছে। আমরা একেবারে কমিয়েও এনেছিলাম। সব কিছু নিয়ন্ত্রণেও এনেছিলাম। অর্থনৈতিক কাজগুলোও চলছিল। কিন্তু আবার বিশ্বব্যাপী এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এবারের করোনাভাইরাসটি হঠাৎ করে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনটি বাংলাদেশেও। আমাদের দেশে ২৯, ৩০ ও ৩১ মার্চ—এতো দ্রুত বেড়ে গেছে, যেটা চিন্তাও করা যায় না।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা অফিস-আদালতে বলে দিয়েছি সীমিত লোক নিয়ে কাজ করতে হবে। বেশি যেন মেশামিশি না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অনেকেই সিমট্রম ছাড়াই করোনায় আক্রান্ত থাকতে পারেন। তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না কিন্তু যার সঙ্গে কথা বলছেন তা মিশছেন তার কিন্তু হয়ে যাচ্ছে। এটাও মাথায় রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বার বার বলেছিলাম ভ্যাকসিন নিলেও সাবধানে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। এই স্বাস্থ্যবিধি মানাটা কিন্তু বন্ধ হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, যতগুলো বড় বড় বিয়ের অনুষ্ঠান। যারা এই বিয়ে বাড়িতে গেছে, ফিরে এসে তাদের অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যারা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে চলে গেছেন। সেখান থেকে যারা এসেছেন তাদের বেশি করে ধরেছে। এই দাওয়াত, খাওয়া-টাওয়া, দোকান-পাটে ঘোরাঘুরি অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল।

করোনা মোকাবিলায় দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে সরকার প্রধান বলেন, প্রথমে করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ার পর যেভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। আমাদের সেইভাবে আবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ইতোমধ্যে কিছু নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা দরকার। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন থাকলে এভাবে আমাদের মানুষগুলোকে হারাতে হতো না।

সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, মাস্ক পরে থাকবেন। কারণ করোনাভাইরাস নাক থেকে গিয়ে সাইনাসে আক্রমণ করে। সেই ক্ষেত্রে সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে নাকে ভাপ নেওয়া। ভাপ নেয়াটা খুবই কাজে লাগে। যখনই কেউ একটু বেশি মানুষের সঙ্গে মিশবেন বা দোকানপাট-অফিসে যাবেন। ঘরে ফিরে একটু যদি গরম পানির ভাপ নেন, খুব ভালো হয়। এটা খুব কঠিন কাজ নয়। একটি কাপড় দিয়ে মাথাটা ঢেকে গরম পানির ভাপটা নিঃশ্বাসে নিলে পরে নাকের ভেতরে সাইনাস পর্যন্ত চলে যায়।

সংসদে বক্তব্য দেওয়ার সময় নিজের মাস্ক না থাকার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে সংসদ নেতা বলেন, আমার মাস্ক আছে মাননীয় স্পিকার। বক্তৃতা দেওয়ার জন্য খুলে রেখেছি। তাছাড়া আমার আশে পাশে এখন কেউ নেই। আমি এটা পরি। আবার কেউ যেন মনে না করেন আমি মাস্ক না পরেই (মাস্ক পরার কথা) বলছি। মাস্ক কিন্তু আমার সঙ্গেই আছে। পরেই বলি। মাস্ক পরে কথা বলতে গেলে কথাগুলো পরিষ্কার হয় না।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগে সব সময় সাইনাসে ভুগতাম। এই ভাপ নেওয়াটা আমার অভ্যাস ছিল। ভাপটা নাকের ভেতর জার্মটার যেখানে থাকার সম্ভবনা আছে, সেখানে পৌঁছাবে। সেটাকে শেষ করে দেবে বা দুর্বল করে দেবে। আরেকটা কাজ আমি নিজে করি, তা হলো কোথাও বের হওয়ার আগে নাকে একটু সরিষার তেল দেওয়া বা যেকোনও তেল দেওয়া। এটাও করতে পারেন। এটা অনেকে গ্রাম্য ব্যাপার মনে করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে আছে ছোট বেলায় যখন গোসল করতে যেতাম দাদি নাকে, কানে, নাভিতে সরিষার তেল দিয়ে দিতেন। নাকে পানি ঢুকবে না এ জন্যই। আমি মনে করি, করোনাকালে এটাও ভালো কাজ। করোনাভাইরাস আসার পর আমি নিয়মিত এটা করছি।

প্রধানমন্ত্রী কাপড়ের মাস্ক পরা এবং তার যত্ন নেওয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, কাপড়ের মাস্ক যেটা, তা সব থেকে ভালো হয়। আর মাস্কটা একবার ব্যবহার করার পর সেটা দ্বিতীয়বার না পরে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে শুকাতে দেবেন। আরেকটা পরবেন। আমরা সব সময় সেটাই করি। আমরা এ জন্য আলাদা বালতি রেখে দিয়েছি।

সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিয়ে-সাদির যেগুলো তারিখ হয়েছে তা একটু ঘরোয়াভাবে করা, বেশি লোকের সঙ্গে না মেশা এবং বাইরে দোকানপাটে গেলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ঘরে ফিরে আসতে হবে। জনসমাগমটা যাতে না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা অফিস আদালতে বলে দিয়েছি, সীমিত লোক নিয়ে কাজ করতে হবে। বেশি যেন মেশামিশি না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অনেকেই সিমট্রম ছাড়াই করোনায় আক্রান্ত থাকতে পারেন। তার হয়তো কোনও সমস্যা হচ্ছে না কিন্তু যার সঙ্গে কথা বলছেন বা মিশছেন, তার কিন্তু হয়ে যাচ্ছে। এটাও মাথায় রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত