টাকার অভাবে চাকরি না হওয়ায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পরীক্ষার্থীর অভিযোগ

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২১, ২৩:৪১

মোঃ আঃ রহিম রেজা

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া জাফরাবাদ আলিম মাদ্রাসার লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েও অধ্যক্ষের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় চাকরি হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন চাকরি প্রত্যাশী জাহিদুল ইসলাম।

জাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, নারিকেলবাড়িয়া জাফরাবাদ আলিম মাদ্রাসার লাইব্রেরিয়ান পদে তিনি সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। নিয়োগ পরীক্ষায় সে প্রথম স্থান অধিকার করলেও নিয়োগ পেতে অত্র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আঃ হাই পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। জাহিদুল দাবি কৃত ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দুইদিন ঘুরিয়ে আরেকজনকে নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মো.জাহিদুল ইসলাম।

মাদারিপুর গ্রন্থাগার ও তথ্য-বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে পড়াশুনা করে ২০১৮ সালে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে যথাযথ নিয়মে আবেদন করেন তিনি। আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে গত ৩০ জানুয়ারী রাতে সে খোজ নিয়ে জানতে পারেন ৩১ জানুয়ারী বরিশালে নিয়োগ পরীক্ষা হবে। সে অনুযায়ী ৪ মার্চ সকালে বরিশালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে লিচু শাহ আলিয়া মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ তলায় গিয়ে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের কাছে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে প্রবেশপত্র চাইলে তিনি মৌখিকভাবে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার নির্দেশ দেন এবং বলেন, ‘পরীক্ষা দেও-প্রবেশপত্র লাগবে না’। সেই সময়ে একই পদের জন্য পরীক্ষায় অংশ নেয় রাজাপুর উপজেলার রোলা গ্রামের মো. সালেক ও আঙ্গারিয়া গ্রামের মো. মহিব্বুল্লাহ।

পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর সব দিয়ে হল থেকে বের হয়ে পুনরায় প্রবেশপত্র চাইলে তিনি জানান, ‘পরীক্ষা তো দেয়াই হয়েছে এখন প্রবেশপত্র দিয়ে কি হবে।’ এরপর ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষার জন্য। মৌখিক পরীক্ষাও অনেক ভালো হয়। পরে নিয়োগ বোর্ডের আচরণে হতাশ হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে রূপাতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত পৌছলে জাহিদুলকে ফোনে ডেকে নেয়া হয় লিচু শাহ মাদ্রাসায়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে জানিয়ে বিভিন্ন খরচ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন অধ্যক্ষ আঃ হাই। পাঁচ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিলে চাকুরি হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন অধ্যক্ষ। পাঁচ লাখ টাকা যোগার করা সম্ভব না জানালে দুইদিন পরে ডাকার কথা জানায় অধ্যক্ষ। এসময় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শুক্তাগড় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক মৃধা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন বলে জাহিদুলের অভিযোগ।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও গড়িমসি করে সময় ক্ষেপন করেন অধ্যক্ষ। বর্তমানে শোনা গেছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গ্রন্থাগারিক পদে অন্য লোককে নিয়োগ করেছেন অধ্যক্ষ আব্দুল হাই। এ ব্যাপারে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হাই’র কাছে রাজাপুর ও ঝালকাঠি বাদ দিয়ে বরিশালে নিয়োগ বোর্ড পাতানোর কারণ কি জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে অসুস্থ বলে ফোনটি কেটে দেন। দ্বিতীয়বার ফোন দিলেও তিনি অসুস্থ্যতার কারণ জানিয়ে পুনরায় ফোন কেটে দেন। এর পরে মাও. আঃ হাই এর ০১৬৭৩৬০৯৯৫৪ নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শুক্তাগড় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক মৃধা জানান, মাদ্রাসার নিয়োগের ব্যাপারে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন অধ্যক্ষ। তিনিই সব জানেন, আমি এবিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার তালুকদার জানান, তিনি ওই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নন এবং ওই নিয়োগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত