‘মাহবুব তালুকদার ইসিকে অপদস্থ করতে যা দরকার সবই করে চলেছেন’

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২১, ১৪:৩৯

সাহস ডেস্ক

জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, মাহবুব তালুকদার কমিশনকে হেয়, অপদস্থ ও নিচে নামানোর জন্য যা করা দরকার সবই করে চলেছেন। তিনি (মাহবুব তালুকদার) ব্যক্তিগত স্বার্থে ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কমিশনকে হেয় করছেন।

মঙ্গলবার (২ মার্চ) ‘জাতীয় ভোটার দিবস’ উপলক্ষে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সিইসি এমন কথা বলেন। এ সময় নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে আজ মঙ্গলবার (২ মার্চ) নির্বাচন কমিশনের নানা অসংগতি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ (লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড) থাকছে না। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় প্রার্থী জয়ী হয়ে যাচ্ছেন। আগের রাতে ভোট হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, এর আগেও নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন মাহবুব তালুকদার। কমিশন থেকেও যথাসম্ভব ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু একই মঞ্চে বসে এভাবে কে এম নূরুল হুদা ও মাহবুব তালুকদারের মধ্যে এই প্রথম পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা ঘটল।

কেএম নূরুল হুদা বলেন, ‌মাহবুব তালুকদার সাহেব অভ্যাসগতভাবে এখানে যোগ দেওয়ার পরদিন থেকে যা কিছু ইসির নেগেটিভ পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে তা পাঠ করতেন। আজকে এর ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটার দিবস উপলক্ষে আজকেও তিনি একটা রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। দেশের নির্বাচন কমিশনের স্বার্থে তিনি কাজ করেন না, ব্যক্তি স্বার্থে ও একটা উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য এ কমিশনকে অপদস্ত করার জন্য যতটুকু যা করা দরকার ততটুকু করেছেন উনি।

তিনি বলেন, এ নির্বাচন কমিশনে তিনি যোগদান করার পর থেকে যতগুলো সভা হয়েছে সব সময় এটা করতেন। আর তা তিনি বলতে থাকবেন। ভেবেছিলাম ভোটার দিবস হিসেবে তিনি কিছু বলবেন। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক বক্তব্য রাখলেন। ইসিকে কতখানি হেয় করা যায়, কতখানি নিচে নামানো যায়, অপদস্ত করা যায় তা তিনি করে চলেছেন।

এর আগে মাহবুব তালুকদার বলেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোর গতিপ্রকৃতি দেখে আমার ধারণা হচ্ছে, বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনের যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও ভারসাম্য রক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা হচ্ছে না। এক কেন্দ্রীয় নির্বাচনে স্থানীয় নির্বাচনের তেমন গুরুত্ব নেই, নির্বাচনে মনোনয়ন লাভই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, স্থানীয় নির্বাচনেও হানাহানি, মারামারি, কেন্দ্র দখল, ইভিএম ভাঙচুর ইত্যাদি মিলে এখন একটা অনিয়মের মডেল তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা হলেও অসংখ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা দুর্ঘটনা মিলে এক ধরনের অবিছিন্নতা তৈরি হয়, যা নির্বাচনের অনুষঙ্গ হিসেবে রূপ লাভ করে।

চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ভোটের উদাহরণ দিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে চমক সৃষ্টিকারী পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে চট্টগ্রামের রাউজানে। মেয়র ও ১২ জন কাউন্সিলর বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে রাউজান থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও তখন তুলে নেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাচনেও ঠিক এভাবে রাউজানে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এটা ‘নির্বাচন’ না বলে ‘মনোনয়ন’ বলাই সম্ভবত অধিকতর সংগত।

তিনি বলেন, সারা দেশে যদি এই মডেলে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জনপ্রতিনিধি হতে পারেন, তাহলে নির্বাচনে অনেক আর্থিক সাশ্রয় হয় এবং সহিংসতা ও হানাহানি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এতে নির্বাচন কমিশনের দায়-দায়িত্ব তেমন থাকবে না। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের আর প্রয়োজন হবে কি না, সেটা এক বড় প্রশ্ন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত