মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে নাম বাদ, শোকে মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:১৯

অনলাইন ডেস্ক

মেহেরপুরের মুজিবনগরে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার শোকে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। মৃত জামাত আলী (৬৫) মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের আনন্দবাস দক্ষিণ পাড়ার মৃত জহর বিশ্বাসের ছেলে।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ বাড়িতে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ, সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই শেষে সাক্ষী দেখাতে না পারায় প্রাথমিক পর্যায়ে জামাত আলীর নাম তালিকায় থেকে বাতিল করে দেয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি। এই শোক সইতে না পেরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) তৈরি নিয়ম বিধির আওতায় মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি গত ৩ ফেব্রুয়ারি একটি তালিকা প্রকাশ করে। যেখানে জামাত আলীসহ ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম বাতিলের তালিকায় আছে। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কোন কারণে সাক্ষী জোগাড় করতে না পারায় বাতিল হয় জামাত আলীর নাম। তারপর থেকেই তিনি দুশ্চিন্তায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে গত বুধবার তিনি মারা যান। অবশ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে জামাত আলীর ছেলে রশিদুল ইসলাম বলেন, আমার আব্বার সাথে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তারা মারা গেছেন। আমার আব্বার কাগজপত্র সবই ঠিক আছে, কিন্তু স্বাক্ষী না থাকায় আমার আব্বাকে যাচাই বাছাই কমিটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেন। সেই শোক তিনি সহ্য করতে না পেরে কয়েকদিন টেনশন করতে করতে স্ট্রোক করে মারা যান।

জামাত আলীর মেয়ে ফুলেশরী জানান, যাচাই বাছাইয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে আমার আব্বার নাম বাদ যাওয়ার পর ভাতার টাকা উঠাতে গিয়ে না পেয়ে তার টেনশন আরও বেড়ে যায়। 

জামাত আলীর স্ত্রী মহিলা খাতুন বলেন, আমার স্বামীকে টেনশন করতে ডাক্তার নিষেধ করেছিল। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় আমরা অনেক বোঝানোর পরও তার দুশ্চিন্তা আর টেনশন কমাতে পারিনি। টেনশন করতে করতে বুধবার ভোর রাতে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান।

মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার বলেন, জামাত আলীর বিষয়ে সিদ্ধান্তটি কমিটির সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নয়। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি বেসামরিক গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান করি এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিয়েছি। তবে উপজেলা কমিটি নাম বাতিল করলেও এটা চূড়ান্ত না। যারা বাতিল হয়েছে তারাও সম্মানী ভাতা পাবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা জামাত আলীর একাউন্টে কোন কারণে হয়তো ভাতার টাকা এসে পৌঁছায়নি। তবে অল্প সময়ের মধ্যে এসে যাবে। এছাড়াও যারা বাদ পড়েছে তাদের আপিল করারও সুযোগ আছে।