ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছে জাতি

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:৩৫

সাহস ডেস্ক

কোভিড-১৯ মহামারির বাস্তবতায় ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে বিনম্র শ্রদ্ধা, যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে ভাষা শহীদদের স্মরণের মাধ্যমে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করছে জাতি। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাঙালির শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব। রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে, আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও কর্নেল (অব) ফারুক খান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সেসব ভাষা আন্দোলনের বীরদের ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালি পায়ে হেঁটে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফুল দিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানে গানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে জাতীয় ভাষা হিসাবে অস্বীকার করে এবং পাকিস্তানের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও ঢাকার সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে আসে।

১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি মিছিল বের হয়। এসময় পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও কয়েকজন নিহত হন।

কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য নির্দেশিকা

এর আগে দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছিল সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠনের থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসাথে সর্বোচ্চ দুইজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। শহীদ মিনারের সকল প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। মাস্ক পরা ব্যতিরেকে কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং দিবসটি পালনে নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠান ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির বাণী

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মাতৃভাষা এবং নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে দিবসটি উদযাপন একটি অনন্য উদ্যোগ।

‘নিজভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ-বিনির্মাণ করতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস,’ বলেন রাষ্ট্রপতি।

আবদুল হামিদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিরক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। এ চেতনাকে ধারণ করে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষের সাথে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপিত হোক, লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো আপন মহিমায় নিজ-নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উজ্জ্বীবিত হোক, গড়ে উঠুক নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য বিশ্ব।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ কামনা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, একটি বিশেষমহল বাংলাভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবং বাঙালিসত্তার বিকাশে জাতির পিতার অবদানকে মুছে ফেলতে সবসময়ই তৎপর ছিল। জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা শাখার গোপনদলিল প্রকাশের মধ্য দিয়ে সে সকল অপতৎপরতা রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে চেতনায় ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতা-অর্জন করেছি, সেই একই চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে বিগত ১২ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়ের রোল মডেল।

দিবসটি যথাযথভাবে পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

দিনটি সরকারি ছুটির দিন। বিম্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশ মিশনেও এ দিনটি পালিত হচ্ছে।

দিনটি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন,  বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং রেডিওগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত