নির্ধারিত মূল্যে ভোজ্যতেল বিক্রি নিশ্চিতে নজরদারির দাবি

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:০৮

সাহস ডেস্ক
সরকারের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যে ভোজ্যতেল বিক্রি নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছে ভোক্তাদের সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

সরকারের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যে ভোজ্যতেল বিক্রি নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছে ভোক্তাদের সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতার বলেন, সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল মিলগেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলগেটে ১২৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১২৭ টাকা এবং খুচরা বিক্রয় মূল্য ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেটে ৫৯০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ৬১০ টাকা এবং খুচরা বিক্রয় মূল্য ৬৩০ টাকা করা হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তকে আর্ন্তজাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দেশীয় ট্যারিফ কমিশনের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোকে প্রকারান্তরে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান বলে অভিযোগ করে ক্যাব।

তারা বলেন, ভোজ্যতেল একটি আমদানিকৃত পণ্য। ট্যারিফ কমিশনের অনুমতি ব্যতিরেকে মূল্য বাড়ানো যায় না। আর যেহেতু মোড়কে বিক্রি হয়, সে কারণে মোড়কের গায়ের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি নিষেধ। তারপরও ব্যবসায়ীরা বাড়তি মূল্যে বিক্রি করছে। আর সরকারের তদারকি সংস্থাগুলো নীরব দর্শক। তাই এই দাম বেঁধে দেয়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে কোনো সুফল আসবে না।

বিবৃতিতে নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফল নেতৃত্বে দেশ করোনা মোকাবিলায় অনেকটা সফল। এছাড়াও অনেকগুলো সূচকে অনেক অগ্রগতি লাভ করলেও গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে সরকারের পুরো অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আবার ব্যবসায়ীরা তাদের অপকর্ম ঢাকতে সরকারি দলে নাম লেখাতেও প্রতিযোগিতায় মেনেছে। ফলে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন সরকার দলীয় অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। যা দেশে ন্যায্য ব্যবসার প্রসারে বড় বাঁধা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইতোপূর্বে সরকার আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিল কিন্তু বেঁধে দেয়া দামে আলু পাওয়া যায়নি। দুয়েকটি জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে ধর্মঘট করলে আর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজারেও দাম বেঁধে দিয়ে, শুল্ক কমিয়ে, বিদেশ থেকে চাল আমদানি করেও কোনোভাবেই অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি।

তারা আরও বলেন, আগামী মাসে পাম ও সয়াবিন তেল উৎপাদনের মৌসুম। ফলে আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমতে পারে। আসন্ন পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেল নিয়ে যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি না করে, সেজন্য এখন থেকে আমদানি, বিতরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে বিপণণে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও পেয়াঁজের মতো কৃষকদের প্রণোদনা নিয়ে সরিষার উৎপাদন বাড়িয়ে সরিষার তেল উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করে বিকল্প বাজার তৈরি করতে হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। জেলা, উপজেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, ভোক্তা প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত বাজার তদারকির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও অস্থিরতা ঠেকানো সম্ভব। মজুতদারি ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে নগদ অর্থ দণ্ডের পাশাপাশি প্রয়োজনে জেল-জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ ধরনের সমাজবিরোধী কাজে জড়িতদের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে।

একই সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিসিবির মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক উৎস থেকে নিত্যপণ্যের আপতকালীন মজুত বাড়ানো এবং টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রিকে নাগরিক পরীবিক্ষণের আওতায় আনা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত