দীপন হত্যা মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৩৮

সাহস ডেস্ক

জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় আট আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কারাগারে থাকা সব আসামিই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) এই আট সদস্যর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।

মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির, আবদুস সবুর ওরফে আবদুস সামাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল রিফাত, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব সাজিদ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের, চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব। তাদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।

রায় ঘোষণা উপলক্ষে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারাগারে থাকা ছয় আসামিকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। এ সময় আসামিদের প্রত্যকের গায়ে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট।

রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালতের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি চালায়।

এর আগে ২৪ জানুয়ারি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজ দিন ধার্য করেছিলেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগ এলাকার আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে ফয়সল আরেফিন দীপনকে ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা অফিসের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। আদালত ওই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রযুক্তিগত তদন্তে জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করেছে।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন গোলাম ছারোয়ার খান। আর আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এ বি এম খায়রুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, আসামি মইনুল হাসান শামীম জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বীকার করেন, তিনিসহ অন্য সহযোগীরা মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনা ছাড়াও তারা বাংলাদেশের আরও কয়েক জায়গায় ব্লগার, প্রকাশক ও লেখকদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত। এসব হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া এবং সেলিম ওরফে হাদী। মইনুল হাসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক আসামি আবদুস সবুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অপর আসামি খাইরুল ইসলামও স্বীকারোক্তি দেন। আরেক আসামি আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হোসেন ও শেখ আবদুল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলার নথিপত্রের তথ্য বলছে, আসামি শেখ আবদুল্লাহ জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সংগৃহীত অর্থ জিয়া ও হাদীর কাছে পৌঁছে দিতেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি ও জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ফয়সল আরেফিন দীপনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। অফিসে পড়ে ছিল রক্তাক্ত দেহ।

জঙ্গিদের জবানবন্দি
আসামি মোজাম্মেল হুসাইন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে লেখাপড়া করেছেন। ২০১৪ সালে সিলেটের আবু বকরের মাধ্যমে তিনি জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। আর ওই বছর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সঙ্গে তার সিলেটের টিলাগড়া এলাকায় পরিচয় হয়। জিয়া ছিলেন তার মূল প্রশিক্ষক। ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক দীপনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া দীপনকে হত্যার নির্দেশ দেন।

আসামি মইনুল হাসান শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, ২০১০ সালে রাফি নামের হিযবুত তাহ্রীরের এক সদস্যের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি যখন সিলেটের মদনমোহন ডিগ্রি কলেজে পড়তেন, তখন রাফি তাকে জিহাদের কথা বলেন। ঢাকায় সেলিম ওরফে হাদীর কাছে পিস্তল চালানো শেখেন। দীপনকে খুন করার আগে তিনি নিজে আজিজ সুপার মার্কেট ও এর আশপাশের এলাকা রেকি করে আসেন। দীপনকে হত্যা করার পর সামরিক শাখার এক সদস্য প্রটেক্টেড টেক্সটে খুদে বার্তা পাঠান। এই খুনের মূল হোতা চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শেখ আবদুল্লাহ বলেন, ২০১৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি তার বন্ধু আকিব বিন শাহরিয়ারের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেন। পরে তার সঙ্গে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার পরিচয় হয়। সংগঠনের কাজে তিনি প্রতি মাসে চট্টগ্রাম থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আনতেন।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খাইরুল ইসলাম বলেন, তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়তেন। ২০১৫ সালে তিনি ঢাকায় আসেন। দীপনকে খুন করার আগে আজিজ সুপার মার্কেট এলাকায় রেকি করে আসেন। পরে তিনি জানতে পারেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার সদস্যরা দীপনকে হত্যা করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত