মধুর ক্যান্টিনে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল জোটের সংবাদসম্মেলন

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:০৭

ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে মধুর ক্যান্টিনে "ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ" এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রগতিশীল জোটের নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এই সংবাদসম্মেলন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সভাপতি মাসুদ রানা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দিন প্রিন্স ও ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি গোলাম মোস্তফাসহ প্রমুখ।

নেতৃবৃ্ন্দ বলেন, আইনের রক্ষক থেকে শুরু করে ক্ষমতার সাথে যুক্ত ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং তাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীরাই এসকল ঘটনার বেশিরভাগের সাথে যুক্ত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আসলে দেশব‌্যাপী যে অগণতান্ত্রিক ফ‌্যাসিবাদী শাসন চলছে তাই এদের ক্ষমতার উৎস।

তারা বলেন, গত অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ থেকে পাহাড়ে সমতলে অব্যাহত ধর্ষণ-নীপিড়ন এবং বিচারহীনতার প্রতিবাদে ধারাবাহিকভাবে আমরা আন্দোলন সংগ্রামে আছি। এর মধ্যে গত ৯ অক্টোবর ঢাকায় সর্বস্তরের জনতার অংশগ্রহণে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেখানে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি উত্থাপিত হয়েছে। এই ৯ দফা দাবির সমর্থনে সাংস্কৃতিক সমাবেশ, নারী সমাবেশ, সাইকেল র‍্যালীসহ নানা কর্মসূচী পালন শেষে গত ১৬-১৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লংমার্চের পথে পথে সারা দেশের মানুষের অভূতপূর্ব সমর্থন-সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। জনতার এই সমর্থনে ভয় পেয়ে শাসকগোষ্ঠী ফেনিতে দফায় দফায় লংমার্চের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের অনেক সহযোদ্ধারা গুরুতর আহত হয়।

নেতৃবৃ্ন্দ বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসজুড়ে সারা দেশে বিভাগীয় শহরগুলোতে মহাসমাবেশ, শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে সমাবেশ এবং ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে সাভার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ইত্যাদি অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক জনতার অংশগ্রহণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত জানুয়ারি মাসজুড়ে ঢাকার লালবাগ, বনানী, খিলগা, মিরপুর, ধানমন্ডী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, তেজগাও, বাড্ডাসহ বেশকিছু অঞ্চলে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাদেশে এবং ঢাকায় এসকল সমাবেশে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছিল।

তারা বলেন, আমরা অত্যন্ত আতংকের সাথে লক্ষ্য করলাম দেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী এই গণজাগরনের মধ্যেই ধর্ষণের মাত্রা, তীব্রতা ও ভয়াবহতা অন্য যেকোন সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই ৮-১০টি ধর্ষণের খবর এই সময়ও এসেছে। এরকম নানা বীভৎস খবর প্রতিদিনই পত্রিকার পাতাজুড়ে থাকছে।

তারা বলেন, সম্প্রতি মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী ধর্ষণ এবং দায়ীর পরিবার বিত্তবান ও প্রতাপশালী হওয়ায় সেই ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে তালবাহানা, শহিদ মিনারে ফুলবিক্রেতা শিশু মীম হত্যার ঘটনা, মোহাম্মদপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করে আইন পাস করেই যে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না সেই আশংকার কথা আমরা আগেই প্রকাশ করেছিলাম। সেই আশংকা এখন সত্য হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।

তারা বলেন, আমরা যদি গত দুই দশকে বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতন-সহিংসতার মামলাগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে সেখানে বিচারহীনতাকেই খুঁজে পাওয়া যাবে। সরকারের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার যে তথ্য-উপাত্ত রেকর্ড করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০০১ থেকে ২০২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত নারী-শিশু নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলোর মাত্র ৩.৫৬ শতাংশের ক্ষেত্রে আদালতের রায় ঘোষিত হয়েছে। আর এসব মামলার মধ্যে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে ০.৩৭ শতাংশের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রায় দুই দশক ধরে যত ধর্ষণ ঘটেছে, নারী-শিশুর ওপর যত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ৯৯.২৩ শতাংশই কোনো শাস্তি পায়নি। অর্থাৎ প্রায় শতভাগ ধর্ষক ও নারী-শিশু নির্যাতক বিচার ও শাস্তির বাইরে থেকে যাচ্ছে; এটাকেই বলে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বিকাল ৩ টায় ঢাকার শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী গণসমাবেশ আহ্বান করে তারা বলেন, পাড়ায় পাড়ায় গণকমিটি করে ধর্ষণ প্রতিরোধে উদ্যোগ নেয়া জরুরী। ধর্ষণের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যে সামাজিক আয়োজন তাকে উচ্ছেদ করা এখন সময়ের দাবি। নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গি তার বিপরীতে নারী-পুরুষের সমতার সমাজ বিধানের লড়াই আজ জরুরী। একই সাথে পর্ণোগ্রাফি-মাদকের অবাধ ব্যবসা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া ছাড়া এই বর্বর অবস্থা থেকে পরিত্রাণের ভিন্ন কোন পথ নেই। তাই আমাদের নয় দফা দাবি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই নারীর জন্য নিরাপদ সমাজের পথে আমরা হাটতে পারব। এই নয় দফা দাবীতে আমাদের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচী চলছে।

নেতৃবৃ্ন্দ আরো বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমরা দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা সকলে এই প্রতিরোধের কর্মসূচীতে অংশ নিন এবং ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি করুন। একই সাথে যে রাষ্ট্রকাঠামো এর বিচার না করে ধর্ষণ এবং ধর্ষককে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে তাকে ভাঙ্গার সংগ্রামকেও জোরদার করুন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত