ঢোঁড়া সাপ হলে হবে না, জাত সাপ হতে হবে: দুদককে হাইকোর্ট

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০২:৪৮

সাহস ডেস্ক

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বিষবিহীন ‘ঢোঁড়া’ সাপ না হয়ে বিষধর ‘জাত’ সাপ হতে বলেছে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলে, দুদকের কাজ হলো দুর্নীতি ও অর্থপাচার প্রতিরোধ করা। সেগুলো করতে গিয়ে দুদককে ঢোঁড়া সাপ হলে হবে না, জাত সাপ হতে হবে। দাঁত নেই এরকম সিংহ হয়ে লাভ নেই। ভাঙা দাঁত নিয়ে কাজ করতে পারবেন না। দন্তহীন বাঘ হলে চলবে না।

রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সুইস ব্যাংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার দাবিতে করা রিটের শুনানিকালে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

এসময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আল খান বলেন, দুদক কখনওই দন্তহীন বাঘ ছিল না। আদালত বলে, দুদককে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে হবে। এ সময় আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, দাঁত আছে কিন্তু দাঁতে বিষ নাই।

দুদক আইনজীবী বলেন, সবই আছে মাইলর্ড। আদালত বলে, অর্থ পাচার রোধে কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেন। এরপর দুদকের আইনজীবীর শুনানি আর এগোয়নি।

রিটের শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান আদালতকে বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার ব্যাপারে দুদকের কাছে যে তথ্য আছে সেটা দাখিল করা, অর্থ পাচার রোধে বিশেষ তদন্ত টিম করার, আইন সংশোধনের জন্য আদেশ প্রদানে এবং বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন সমশেরের অর্থ জব্দ করার জন্য আদেশ চেয়েছি।

আদালত বলে, সঠিক তথ্য না থাকলে আমরা এটা কিভাবে দেব। আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, রুল দিয়ে আপনারা দুদকের কাছে তথ্য চান। দুদক তথ্য দিতে বাধ্য। মুসা বিন শমসের ১৬ পৃষ্ঠার সম্পদের হিসাব দাখিল করেছে। পত্রিকার মাঝে এসেছে। এরপর দুদক কি পদক্ষেপ নিয়েছে। এটা জানতে চান।

আদালত বলে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি না থাকলে দুদক দিতে পারবে না। কিভাবে দেবে? আইনজীবী বলেন, উনারা সুইস সেন্ট্রাল ব্যাংকের কাছে দরখাস্ত দিক। বলুক, এটা বিতর্কিত বিষয়। এটা নিয়ে বাংলাদেশের আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এই অর্থ জব্দ করা হোক। আদালত বলে, দুদক অন্য একটি মামলায় বলেছে, বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সশিয়াল ই্নটেলিজেন্স ইউনিট) যদি তথ্য দেয়, তাহলে পুনরায় তথ্য পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

এ সময় ভারতের আদালতের একটি মামলার রায়ের উদাহরণ টেনে আইনজীবী কাইয়ুম বলেন, ওখানেও অনেক এ রকম বেফাস কথা-বার্তা বলেছে। এটা দেয়া সম্ভব না, ওটা সম্ভব না। আদালত সরকার পক্ষের প্রত্যেকটি যুক্তির পোস্টমর্টেম করে বলেছে, তথ্য দিতে বাধ্য। আমাদের একটাদিন সময় দেন, শুধু তথ্য দিতে পারে কিনা-এ ব্যাপারে শুনানি হোক।

আদালত আগামী মঙ্গলবার এ ব্যাপারে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে, গত ১ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস এই রিট করেন। রিটে মুসা বিন শমসেরসহ অন্যদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। আবেদনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিট আবেদনে বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে সুইস ব্যাংকসহ গোপনে বিদেশের ব্যাংকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বিবাদীদের চরম ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত