রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনিশ্চিত

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:১৮

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ এখনও মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের সাথে কথা না বললেও চীন সরকার মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা করায় চীনের সাথে যোগাযোগ করছে।

মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তারা মহাপরিচালক পর্যায়ের পূর্ব নির্ধারিত যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে মতামত পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

এর আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পূর্ব নির্ধারিত আলোচনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের আজকের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ আলোচনা দেখতে চায়।

এর আগে বাংলাদেশের সাথে ২০১৭ সালে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়কমন্ত্রী কাইয়া টিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানান।

এছাড়া বাংলাদেশসহ সকল প্রতিবেশী দেশের সাথে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান ও পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ক সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে মন্ত্রী চিঠিতে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশের সাথে পারস্পারিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যেকোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের সমাধান করতে চায়।

গত ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যাচাই বাছাইয়ের জন্য ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার মানুষের তথ্য যাচাই করেছে। এ বিষয়ে তাদের গুরুত্বের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করলেও মিয়ানমার তা করছে না।

তবে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার।

প্রায় তিন বছর আগে মিয়ামারের সেনারা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে ‘হত্যা ও ধর্ষণ’ চালায় এবং রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেয়। জাতিসংঘ, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনাটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং আরও অনেকেই এ বিষয়টি দেখিয়েছে।

সেসময় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ‘সহিংস গণহত্যা’ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং বাংলাদেশ এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ একাধিক উপায়ে- দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুায়ারি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে ঢাকা-নেপিডো, যা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়েছিল।

মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুবার প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে আরও অধিকতর চাপ প্রয়োগ এবং বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ প্রত্যাবাসন শুরু করতে ‘আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

২০ জানুয়ারি প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র সচিব জানান, আগের দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা এগিয়ে যেতে চান, যাতে সফলভাবে এবার প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়।

প্রত্যাবাসনের অবস্থা তৈরিতে উভয় দেশের মধ্যে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং দেশটির রাষ্ট্রপতি ইউ উইন মিন্টকে সোমবার ভোরে আটক করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা জানিয়েছে এক বছরের জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার পর দেশে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নতুন সরকারের হাতে ফিরিয়ে দেবে।

স্টেট কাউন্সেলর, রাষ্ট্রপতি এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। জরুরি অবস্থা চলাকালীন ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার এবং গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যালোচনা করা হবে বলে সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে।

সুত্র: ইউএনবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত