মহামারির প্রভাবে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ: সানেম

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ০০:৫১

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ এর পরিস্থিতির প্রভাবে দেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক খানা জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য বেড়েছে রংপুর আর রাজশাহী বিভাগে।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির এক ওয়েবিনারে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গেল বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশজুড়ে খানা পর্যায়ে পরিচালিত এ জরিপ চালিয়ে আজ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সানেম। টেলিফোনে পরিচালিত এই জরিপের আওতায় ছিল দেশের ৬৪ জেলায় ৫ হাজার ৫৭৭টি খানা।

সানেম বলছে, যে দুই মাসে জরিপ চলেছে তখন দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ শতাংশ।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ আর রংপুরে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে বেশি ছিল ময়মনসিংহে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

সরকারের হিসাব অনুযায়ী এক বছর আগে ২০১৯ এর ডিসেম্বরে সার্বিকভাবে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল২০ দশমিক ৫ শতাংশ।

কোভিড-১৯ মহামারির ফলে গত বছরের শেষ নয় মাসে আয় কমে যাওয়া ও কর্মচ্যুতির ফলে ৪৮ দশমিক ৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে ঋণ করে আর ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে জীবন নির্বাহ করেছেন।

দেশের ৬৪টি জেলার উপর চালানো ‘দারিদ্র্য ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সানেম।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ আর করোনার সময়ে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

জরিপে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্স বা প্রবাসীয় আয়ের ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হলেও ব্যক্তিক পর্যায়ে তা বরং কমে গেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, অনানুষ্ঠানিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবাসী আয় এসেছে। এতে বিনিময় হার কমে গেছে। ৮২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পরিবার বলেছে, দেশের বাইরে থেকে আসা প্রবাসী আয় কমেছে। একই ক্ষেত্রে আগের মতো আছে বলেছে ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ পরিবার। ফলে প্রবাসী আয়ের প্রভাব সমাজে অতটা অনুভূত হয়নি, যতটা বলা হয়েছে, সে তুলনায়।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সানেমের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, জরিপ পরিচালনার খরচ আছে। তবে তহবিল পাওয়া না গেলেও সানেম নিজস্ব অর্থায়নে জরিপটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেলিম রায়হান বলেন, ‘এটা না হলে আমরা একটি পরিপ্রেক্ষিত হারিয়ে ফেলতাম। সেই তাড়না থেকেই এই জরিপ। দারিদ্র্য, অসমতা ও কর্মসংস্থান, এই তিনটি ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব নিরূপণ করা হয়েছে।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, করোনার প্রভাবে দারিদ্র্যের কারণে মানুষ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছেন, ঋণ নিয়েছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন। আবার জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ পরিবার বলেছে, তারা খাপ খাওয়ানোর পথই খুঁজে পায়নি।

২০১৬ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি-সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

জরিপের ফলাফল নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মোকাদ্দেম (এমএম আকাশ) ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।