ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবার তার গৌরব ফিরে পাক: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০২:০৭

সাহস ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়বে তাতে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আলোকিত হয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলায় ব্রতী হবে।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সংগে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঙালি জাতির সকল অর্জনের বাতিঘর আখ্যায়িত করে বলেন, আমার একটাই আকাংক্ষা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার যে মানবসম্পদ গড়ে তোলা সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হবে। সমগ্র বাংলাদেশে যত বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে যাচ্ছি তারাও সেটা অনুসরণ করবে এবং সেভাবেই দেশকে আমরা এগিযে নিয়ে যাব।

‘সেলিব্রেটিং দ্য হান্ড্রেড ইয়ার্স অব দ্যা ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা: রিফ্লেকশন ফ্রম দ্য অ্যালুমনাই- ইন্টারন্যাশনাল এন্ড ন্যাশনাল’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমি চাই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার হৃত গৌরব ফিরে পাক সেটাই তার এবং সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই এর পূর্ব গৌরব আবার ফিরে আসবে। এখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, গবেষণা হবে, শিক্ষার প্রসার ঘটবে- সেটাই আমরা চাই। আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আমরা যেন বিশ্বের সংগে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। আর সেটা পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেটি আমাদেরকে প্রতিটি অর্জনে পথ দেখিয়েছে। কাজেই এই বিশ্ববিদ্যালয় আরো সুন্দর এবং উন্নত হোক, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তার সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

তিনি ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে যেন আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য গৃহীত মাস্টার প্ল্যানের আওতায় বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ সম্প্রসারণের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

‘১৯২১ সাল থেকে ২০২১’ গৌরবময় এই শতবর্ষ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দিপু মনি বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রোভিসি (শিক্ষা) ড.এএসএম মাকসুদ কামাল অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং অপর প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ সাইটেশন পাঠ করেন। সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ঢাবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামানের হাতে সম্মেলনের সুভ্যেনির তুলে দেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।

সরকার শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি এবং ভোকেশনাল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সমগ্র দেশেই কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষাকে বহুমুখীকরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বাঙালি জাতি বিশ্বের যে মর্যাদা অর্জন করেছিল তা ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে হারিয়ে ফেলে। সে মর্যাদা পুনপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

সরকার গঠনের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শিক্ষাঙ্গনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিই তার সরকারের অন্যতম লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, গোলাগুলি ও বোমাবাজির আওয়াজ আর শোনা যায়না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটা নিয়ন্ত্রণ করার মত যথেষ্ট দক্ষতা আওয়ামী লীগের রয়েছে এবং মানুষও এখন আগের চেয়ে বেশি সচেতন। আমরা যে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পেরেছি সেটাই বড় কথা। এখন আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান এবং শিক্ষার্থীরও দায়িত্ব শিক্ষা গ্রহণ করা। কারণ শিক্ষিত জাতি ছাড়া কেউ কখনো এগাতে পারবেনা। বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সকলেই কাজ করবেন।

জাতির পিতা যে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন তাঁকে সমুন্নত রেখে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বে বাঙালি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও তিনি সকলকে কাজ করার আহবান জানান।

তিনি সরকারের সহযোগিতা প্রসঙ্গে বলেন, আমার পক্ষ থেকে এটুকু বলতে পারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের সহযোগিতা আপনারা পাবেন। একজন অ্যালুমনাই হিসেবেও আমি সে কথা বলতে পারি।

করোনাভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশের যে অগ্রগতি তাঁকে ধরে রাখার জন্য এবং আগামীতে আরো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার মাঝেও করোনাভাইরাস আমাদের বাধা দিয়েছে এবং সেটাকে অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এজন্য গবেষণার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণা ছাড়া কোন অর্জন সম্ভব নয়। আপনারা গবেষণাকে গুরুত্ব দেবেন, সেটাই আমরা চাই।

সরকার করেনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্ভাব্য সবধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং করোনার জন্য ২০ লাখ ভ্যাকসিন উপহার পাঠানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন করোনার জন্য ভারত সরকার যে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে তা ইতোমধ্যেই আমাদের কাছে পৌঁছেছে। এজন্য আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত