রাজাপুরের জীর্ণ ভাঙা খুপড়ি ঘরে বৃদ্ধ দম্পত্তির মানবেতর জীবন!

বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে আর্ধাহারে অনাহারে

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:২০

রহিম রেজা

ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া ইউনিয়নের জীবনদাসকাঠি গ্রামের বৃদ্ধ অসহায় রহিমা বেগম-আব্দুল মান্নাফ দম্পত্তি জীর্ণ ভাঙা খুপড়ি ঘরে শীত ও বৃষ্টিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে আর্ধাহারে অনাহারে।

জানা গেছে, রহিমা ও আব্দুল মান্নাফ দম্পতির দাম্পত্য জীবনে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে। বিষখালী নদীর তীরে বসবাস করায় ছোট বেলা থেকে এ দম্পতির একমাত্র ছেলে মাছ ধরে সংসারে বাবার সাথে সাহায্য করতো। কিন্তু ২০ বছর পূর্বে ২০ বছর বয়সে সংসারের বাড়তি উপার্জনের জন্য সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন। তারপর আর ফিরে আসেননি। বয়সের ভারে আব্দুল মান্নাফ (৮০) ন্যুজ হয়ে পড়েছেন। স্বাভাবিক চলাফেরাও করতে না পারায় শুয়ে বসেই দিন পার করেন বৃদ্ধ মান্নাফ। তাদের ৩ মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন। জামাইরাও তো টেনেটুনে সংসার চালায়। ছোট মেয়েটা মা-বাবার কাছে থাকে, তার স্বামী বাসের হেল্পার।

বৃদ্ধা রহিমা বেগম (৬৮) জানান, তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে, রাস্তার পাশে মাটি দেয়ার কাজ করাসহ যখন যে কাজ পায় তাই করে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগার করতেই কষ্ট হয়। অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা এবং ওষুধ খরচ মেটানো অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়। ঘরের অবস্থাও অনেক খারাপ। বাতাস এলেই ঘরটি নড়তে থাকে, ভয়ে থাকি কখন যেন মাথা গোজার শেষ আশ্রয়টুকু ভেঙে পড়ে যায়। বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে পানি পড়ে ভিজে যায় সবকিছুই। শীতের সময় এলে শীতবস্ত্র ও শীত নিবারণের কোন গরম কাপড় না থাকায় চটের বস্তা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়। খাবার ব্যবস্থা ও স্বামীর ওষুধের খরচ মিটালে অন্যদিকে টাকা খরচের আর কোন উপায় থাকে না। এজন্য সঠিকভাবে চিকিৎসা খরচ চলছে না।

রাজাপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ আল আমিন বাকলাই জানান, দাপ্তরিক কাজে জীবনদাশকাঠি গিয়ে দেখা হলো রহিমা বেগমের সাথে। অচল স্বামীকে নিয়ে এই ঘরে বসবাস করেন। আমরা যারা দালান-কোঠা, ইট-পাথরে  থেকে শীত আটকাচ্ছি একবারও কি ভাবছি এদের শীত কেমনে কাটছে,আসছে বর্ষাকাল কেমনে কাটবে। প্রশাসনসহ সকলের তাদের পাশে এগিয়ে আশা উচিত।

রাজাপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) অনুজা মন্ডল জানান, যাদের সুযোগ আছে এইসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করবার, তাদের উচিত সরাসরি সেই দপ্তরকে জানানো। কারন, সারাদিনের অফিসিয়ালি ব্যস্ততায় বাড়তি নজর দেওয়ার সুযোগ না ও হতে পারে। সরাসরি জানানোটা অনেক দ্রততর, সহজ এবং সুবিধাজনক পন্থা বলেই মনে হয়।

ইউএনও মোক্তার হোসেন জানান, তার বাড়িতে গিয়ে রহিমা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে এসেছি, যদি ঘরের জন্য আগের তার আবেদন করা থাকে তাহলে যাচাই করে আর না থাকলে নতুন করে আবেদন করিয়ে পরবর্তীতে সরকারী ঘর বরাদ্ধ এলে প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাকে ঘর দেয়া হবে।

ইউএনও আরও জানান, রহিমা বেগমের অসহায় জীবনযাপনের বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা ত্রাণ তহবিল থেকে সহায়তা নিয়ে শুক্রবার সকালে তাদের বাড়িতে হাজির হয়েছি। রহিমা বেগমের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, নুডলস ও অন্যান্যসহ ১ বস্তা খাদ্যপণ্য এবং ২টি কম্বল উপহার দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগীতা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত