অনিরাপদ যানই একমাত্র ভরসা রামগতিবাসীর!

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:২৬

ছবি: মিসু সাহা

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার অধিকাংশ জনগণের প্রধান যানবাহন অনিরাপদ সিএনজি। রামগতি বাজার থেকে সদর আলেকজান্ডার কিংবা পাশ্ববর্তি জেলা নোয়াখালী যেতে হলে একমাত্র ভরসা এই সিএনজি। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে চলাচল করছেন এ উপকূলীয় অঞ্চলের অবহেলীত মানুষগুলো। সময়মত যেতে পারছেন না গন্তব্যে, তাই প্রায় বিড়ম্ভনায় পোহাতে হচ্ছে এ অঞ্চলের যাত্রীদের।

রামগতি পৌরসভা, চরবাদাম ও আলেকজান্ডার ইউনিয়নের জনগণ নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে যাতায়তের জন্য বাস সার্ভিসটি পুরেপুরি থাকলেও বাকিরা সিএনজি নির্ভর।

উপজেলার অধিকাংশ মানুষ বাস সার্ভিস থেকে বঞ্চিত, তাই তারা প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে সিএনজি দিয়ে যাতায়াত করছে। এসুযোগে সিএনজি চালকরা যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। প্রায় ভোগান্তির শেষ থাকে না সাধারণ যাত্রীদের।

রামগতি বাজার থেকে লক্ষ্মীপুরে সবসময় যাওয়ার জন্য নেই কোন বাস সার্ভিস, বাধ্য হয়ে যাত্রীরা সিএনজি, লেগুনা কিংবা অবৈধ অটো রিক্সায় দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে আলেকজান্ডার যেতে হয়। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হলো গভীর রাতে লক্ষ্মীপুর থেকে আলেকজান্ডার পর্যন্ত আসা গেলেও যাওয়া যাচ্ছে না রামগতি বাজারে। কেননা সন্ধ্যার পর যাত্রীবাহী সিএনজি সার্ভিসও বন্ধ হয়ে যায়, আর যাত্রীরা বেগ পেতে হয় অস্বাভাবিক পরিস্থিতির।

এছাড়াও ভোগান্তি রয়েছে ভাড়া নিয়ে, রামগতি থেকে আলেকজান্ডার ১৭ কি.মি রাস্তার সিএনজি ভাড়া ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, মাঝে মধ্যে কোন কারণ ছাড়াই তা বেড়ে ৮০ টাকা হয়ে যায়। প্রয়োজনের তাগিদে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কিংবা রির্জাভ নিয়ে চলাচল করতে হয়।

এদিকে কোন কারণ ছাড়াই রামগতি-সোনাপুরের ভাড়া ৭০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কোন তর্কে না জড়িয়ে মুখ বুঝে চলছেন এ অঞ্চলের যাত্রীরা, কেননা নেই কোন বিকল্প যান ব্যবস্থা। সবচেয়ে বড় দু:খের ব্যাপার হচ্ছে একটু সন্ধ্যা নেমে আসলেই এ ভাড়া হয়ে যায় ১০০-১৫০ টাকা। এর পরেও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই।

সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সায়েম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা অনেক আতঙ্কে রয়েছি। রামগতি বাজার থেকে নিরুপায় হয়ে সিএনজি যোগে সোনাপুর ও আলেকজান্ডার যাতায়ত করছি ঠিকই কিন্তু মানসিক শান্তি নেই। যাত্রাপথে দু:চিন্তায় থাকতে হয় কখন কি হয়। দ্রুত বাস সার্ভিস চালুর মাধ্যমে এথেকে পরিত্রাণ চাই।’

নোয়াখালী সরকারি কলেজের স্নাতক (পাস) কোর্সের ২য় বর্ষের ছাত্র মো: ফজলু জানান, ‘রামগতি-সোনাপুর রোডের বাস সার্ভিসের অবস্থা নাজুক। বাস সার্ভিস না থাকায় বাধ্য হয়ে সিএনসি’র উপর ভর করে চলতে হয়।’

আ স ম আবদুর রব সরকারি কলেজের বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অশ্রু সাহা জানায়, ‘রামগতি বাজার থেকে কোন বাস সার্ভিস না থাকায় প্রায়ই পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। দীর্ঘদিন থেকে আমরা অবহেলীত, বাস ছাড়া অনিরাপদ যানে চলাচল করতে হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, আর দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত বাস সার্ভিস চালুর দাবী করছি।’

লক্ষ্মীপুর-আলেকজান্ডার রোডের মিশু পরিবহনের বাস চালক হুমায়ুন কবির জানান, ‘সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পুনরায় বাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বেশকিছু স্থানে সড়ক সংস্কার ও বাস স্ট্যান্ডের জায়গা সুনিশ্চিত করতে হবে।’

প্রধান সমস্যা রাস্তাকে দায়ী করছেন লক্ষ্মীপুর বাস মালিক সমিতি। রামগতি-আলেকজান্ডার প্রায় ১৭ কি.মি. সড়কের বেহাল দশা এবং রাস্তা সরু হওয়ার ফলে বাস চলাচলে অসুবিধা হয়।

লক্ষ্মীপুর-রামগতি বাজার বাস সার্ভিস চালু ও রামগতি-সোনাপুর বাস সার্ভিস সময়মত ও পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে অনিরাপদ যান ও অতিরিক্ত ভাড়া থেকে পরিত্রাণ চায় সচেতন মহল। দ্রুত বিআরটিসি বাস সার্ভিস কিংবা প্রাইভেট বাস সার্ভিস চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন রামগতিবাসী।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত