আহমদ শফীর মৃত্যুকে আবারও হত্যাকান্ড উল্লেখ করেছেন তার সন্তান

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:১৬

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

হেফাজত ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যাকান্ড হিসাবে আবারও উল্লেখ করেছেন তার সন্তান মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ শফী আল মাদানী। তিনি বলেন, এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করে দোষীদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়।

মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

শফীর জ্যেষ্ঠপুত্র আরও তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে- তার পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা তদন্ত করে অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা; আল্লামা শফীর পরিবারের সদস্যদের ও তার অনুসারীদের নিরাপত্তা বিধান করা ও যারা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং আল্লামা শফীর রেখে যাওয়া সব দ্বীনি ও সামাজিক অঙ্গনগুলো থেকে হযরতের বিরোধীদের অপসারণ করা।

লিখিত বক্তব্যে মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর আগের তিন দিন হাটহাজারী মাদ্রাসায় নারকীয় তান্ডব ও ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। তার অফিস রুম ও হাটহাজারী মাদ্রাসার অনেক শিক্ষকের রুম ভাঙচুরের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুনিয়াবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। জীবনের শেষ মুহূর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে অতি প্রয়োজনীয় ওধুষ গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। রুমের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, এসি-ফ্যানসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছিল, চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছিল, মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলা হয়েছিল, হাসপাতালে যেতে বিলম্ব ঘটানো হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, একশ বছরের বেশি বয়সী এই বয়োবৃদ্ধ আলেমের নাতির গলায় ভাঙা কাচ ধরে বলা হয়েছিল, “এই বুইড়া, স্বাক্ষর কর। না হয় তোর নাতিকে হত্যা করবো।” এ কথা বলে জোর-জবরদস্তিমূলক স্বাক্ষর নিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। এসব কিছুর পরও কি বলতে হবে, আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে?’

মাওলানা ইউসুফ বিন আহমদ জানান, একটি চরমপন্থী উগ্রগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সহজ-সরল ছাত্রদের উসকানি দেওয়া হয়েছে। সবকিছুই তো দেশবাসীর সামনে ঘটেছে। তারপরও বলতে হবে, আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে? আরও জঘন্যতম বিষয় হলো, হেফাজতের তথাকথিত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী গত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষকদের সামনে বসিয়ে রেখে বলেছেন, “হুজুরের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।” কী চরম মিথ্যাচার! এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দেশের শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠানের মুহাদ্দিসদের সামনে যেভাবে তিনি মিথ্যাচার করেছেন, আল্লাহ তায়ালার দরবারে এর জন্য কী জবাব দেবেন? অথচ জেনেশুনেও তারা এই মিথ্যাচারগুলো শুনে গেছেন, একটু প্রতিবাদ করার সাহসও কারও হয়নি! এটা কি আলেমদের স্বভাববিরোধী নয়?

মাওলানা ইউসুফ বলেন, জুনায়েদ বাবুনগরী বারবার বলছেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়েছে। আর এর স্বপক্ষে তিনি আমার ভিডিওবার্তার মাধ্যমে দেওয়া স্বীকারোক্তিকে বড় দলিল হিসেবে পেশ করছেন। অথচ আমার কাছ থেকে জোর করে এই স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর আর তা প্রচার করা হয়েছে এক সপ্তাহ পর। এতেই প্রমাণিত হয়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বাঁচানোর হীন উদ্দেশ্যে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। অথচ আমি পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওবার্তায় বলেছি যে, আমাকে জিম্মি করে জোরপূর্বক ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে এই পরিত্যক্ত স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল। আমি পরিষ্কার ভাষায় বলেছি, আমার বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক হয়নি। এরপরও বিগত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের নামে মামা-ভাগ্নের সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরী আমার সেই স্বীকারোক্তিকেই বড় দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। এবং তিনি মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি-ধামকি দিয়েছেন, আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেছেন। আমাদের প্রশ্ন, আমার পিতার মৃত্যু যদি স্বাভাবিক হয়ে থাকে তাহলে তদন্তে বাবুনগরী গং-এর এত ভয় কিসের? তার দাবি অনুযায়ী তদন্তে তিনি তো নির্দোষই সাব্যস্ত হবেন। এই মামলায় তো কাউকে অযথা হয়রানি করার জন্য করা হয়নি। সুতরাং এই মামলার তদন্তে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করা হলে এর সম্পূর্ণ দায় বাবুনগরী গংদের উপরই বর্তাবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত