দার্জিলিং কমলা ও মাল্টা চাষে সফল যশোরের চাষী করিম

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:২৯

শ্রাবণ রায় টবি

যশোরের একজন সফল মাল্টা চাষী আব্দুল করিম। তিনি দার্জিলিং প্রজাতির কমলা ও মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন যশোরের মণিরামপুরের আব্দুল করিম। মাত্র এক বিঘা জমি দিয়ে শুরু করে এখন তিনি ১৫ বিঘা জমিতে চাষ করছেন সুস্বাদু এই দুটি ফল। তার সাফল্যে উৎসাহ পেয়ে আরো অনেকে শুরু করেছেন এ ফলের চাষ।

কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষক আব্দুল করিমের দেখাদেখি যারা কমলা ও মাল্টা চাষাবাদ শুরু করেছেন তাদের প্রশিক্ষণসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

দেশের মাটিতে দার্জিলিং কমলার চাষকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন মণিরামপুরের মুজগুন্নী গ্রামের আব্দুল করিম। সহযোগী ফসল হিসেবে বারি মাল্টা চাষও শুরু করেন তিনি। মাত্র এক বিঘা জমি দিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। এরপর গাছ ও মাটির পরিচর্যা করে তার গাছে ফলান সুমিষ্ট ও সুস্বাদু কমলা। ভালো ফলনও হয়। সাথী ফসল বারি মাল্টাতেও সফলতা পেয়েছেন তিনি।

আব্দুল করিম বলেন, প্রায় ছয় বছর আগে খুলনার কৃষি গবেষণা ইনসটিটিউট থেকে ১২৫ পিস মাল্টা আর ২৫ পিস কমলার চারা আনি। উচ্চতা অনুযায়ী এগুলো ১০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনেছিলাম। সেগুলো লাগানোর দেড় বছর পর ফলন পাই। এ পর্যন্ত চারদফা উৎপাদন হয়েছে। প্রথমদফায় খরচ ও বিক্রি মিলিয়ে সমান সমান ছিল। এরপরের বছর আড়াই লাখ, ৩য় মৌসুমে চার লাখ এবং ৪র্থ সীজনে ছয় লাখ টাকা আয় হয়েছে।

আব্দুল করিমের মাল্টা-কমলার ক্ষেতে চকচক করছে বিদেশি জাতের এই ফলগুলো। এগুলো বাজারে থাকা যেকোনো মাল্টা বা কমলার চেয়ে স্বাদে অনেক ভালো। এর রঙ দেখতে সুন্দর। এছাড়া আকারেও বেশ বড়। তার এই ক্ষেত দেখতে এবং নার্সারি থেকে চারা নিতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থানের নানাজন। ফলের স্বাদ ও গঠন দেখে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন চারা। আবার কেউ চাষের পরামর্শ নিচ্ছেন।

আব্দুল করিম বলেন, দেশে এখন শিক্ষিত ছেলেরা চাকরির পেছনে ঘুরে বেড়ায়। এইসব ফলচাষ করে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে নিশ্চিন্তে। একই ভাবে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এই খাতে। 

আব্দুল করিমের এক বিঘা জমি থেকে ফলের চাষ এখন প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে হচ্ছে। মাল্টা আর দার্জিলিংয়ের কমলা চাষ হচ্ছে সেখানে। চলতিবছর ওই মাঠে প্রথম ফল এলেও সেগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। সামনের বছর সেইসব গাছে প্রচুর ফল আসবে বলে তিনি আশা করছেন।

তিনি বলেন, জমিতে নিয়মিত সার বিশেষ করে জৈবসার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। এছাড়া কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরামর্শমতো একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া দিচ্ছি জমিতে। এগুলো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলে। ভাদ্র মাসের গরমে ওপরে শেড দিতে হয়। না হলে ফল নষ্ট হয়ে যায়।
ক্ষেত থেকে তার উৎপাদিত সুস্বাদু মাল্টা আর কমলা বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, এই কয় বছরে টুকটাক করে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে। আগামী বছর তিনি এই খাত থেকে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

আব্দুল করিম ফল ছাড়াও মাল্টা ও কমলার চারা বিক্রি করেন। গত দুই বছর ধরে তিনি চারা বিপণন করছেন। প্রতিবছর ২০ হাজার পিস চারা বিক্রি করা হয়ে থাকে। উচ্চতা অনুযায়ী তিনি এই ফলের চারা ১০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।  

তার খামারে এখন ১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা জমি নিড়ানো থেকে শুরু করে জমিতে স্প্রে, সার প্রয়োগ, ফল আহরণসহ সার্বিক কাজ করে থাকেন।

মণিরামুপর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরককুমার সরকার বলেন, আব্দুল করিমের দেখাদেখি মণিরামপুরে এখন প্রায় দুইশত বিঘা জমিতে মাল্টা ও কমলা চাষ হচ্ছে। নতুন অনেকেই এখন মাল্টা ও কমলাচাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
যারা এই প্রজাতির ফলচাষ করছেন, তাদের কৃষি বিভাগ থেকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত