কুষ্টিয়ায় এবার বিপ্লবী বাঘাযতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:২২

সাহস ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে মাত্র দু'সপ্তাহ ব্যবধানে সেই কুষ্টিয়াতে এবার বিপ্লবী বাঘাযতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। সকালে ভাস্কর্য ভাঙচুরের স্থান পরিদর্শন করেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম খান।

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে কোনো এক সময়ে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার কয়া কলেজে স্থাপিত বাঘাযতীনের ভাস্কর্যটির ডান গাল ও নাক ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম আতিক জানিয়েছেন, তাদের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনা সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম খাঁন জানান, কে বা কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্তের কাজ শুরু করেছে। দোষীদের খুব শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে, গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার দুই মাদরাসা ছাত্রকে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে নেয়া হয়েছে।

তারা হলেন- কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিংপুর গ্রামের সমশের মৃধার ছেলে আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) এবং দৌলতপুর উপজেলার ফিলিফনগর গ্রামের সামছুল আলমের ছেলে সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০)। তারা দু’জনই কুষ্টিয়ার জুগিয়া এলাকার ইবনে মাসউদ (রা.) মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।

প্রসঙ্গত, রাজধানীতে জাতির পিতার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়। গত ১৩ নভেম্বর দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম। তাদের এই মন্তব্যে দেশব্যাপী সৃষ্টি হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা।

চলমান এ পরিস্থিতির মধ্যেই কুষ্টিয়া শহরে ভাঙা হয় বঙ্গবন্ধুর একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্য। আর এবার সেই কুষ্টিয়াতেই ভাঙচুর করা হলো বিপ্লবী বাঘাযতীনের ভাস্কর্য।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে মন্তব্যের জন্য রাষ্ট্রদোহের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, মামুনুল হক ও সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙা ও অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

গত ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন। একই সাথে ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি ও স্ট্যাচুর পক্ষে সচেতনতা গড়তে ইসলামি ফাউন্ডেশন ও ইসলামি খতিবকে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালাতে বলেছে আদালত।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ দেশের সব ভাস্কর্যের নিরাপত্তা চেয়ে গত ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিটটি করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত