রোগী পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা কমিশন নিয়েছেন ডাক্তার মামুন

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২০, ১২:০৫

সাহস ডেস্ক

মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে গত ১৬ মাসে ১০ লাখ টাকারও বেশি কমিশন নিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এ তথ্য জানিয়েছে ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। 

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) গ্রপ্তারের পর ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের ২ দিনের রিমান্ড মনজুর করে বিজ্ঞ আদালত। ওই দিন রাতে এবং বুধবার সকালে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের একজন উপ-পরিচালক ও কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের এক আবাসিক চিকিৎসকের রোগী ভাগানোতে জড়িত থাকার তথ্যসহ আরো বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মামুন। এদিকে ৭ দিনের রিমান্ড শেষে মাইন্ড এইডের ৪ কর্মচারীকে বুধবার (১৮ নভেম্বর) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়া আরো ৬ কর্মচারীকে কারাগারে পাঠানো হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে ডা. মামুন জানান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার লোক (দালাল) সেট করা আছে। সচ্ছল রোগী দেখলেই তারা রোগীর স্বজনদের বিভিন্নভাবে ফুঁসলিয়ে ডাক্তার মামুনের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিতেন। এরপর ডাক্তার মামুন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে দিতেন। 

ডা. মামুন জানান, হাসপাতালটিতে রোগী পাঠালেই ৩০% কমিশন পেতেন তিনি। এছাড়া রোগীপ্রতি কমিশন পেতেন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগীও দেখতেন তিনি। সেখান থেকেও আলাদা টাকা পেতেন। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি শুধু মাইন্ড এইড হাসপাতালে ২৫ জনের বেশি রোগী পাঠিয়েছেন। এতে অন্তত ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ডা. মামুন।

পুলিশ জানায়, মাইন্ড এইড হাসপাতাল ছাড়াও আদাবরের মাইন্ড ওয়েল হাসপাতালেও রোগী পাঠাতেন। এছাড়া টাঙ্গাইল ও আশপাশের কোনো রোগী ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এলে তাকে কৌশলে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতেন। এসব বিষয়কে দোষ হিসেবে দেখছেন না ডা. মামুন। 

জিজ্ঞাসাবাদে ডা. মামুন পুলিশকে বলেন, আমি তো একা নই। সরকারি হাসপাতালের অনেক ডাক্তারই তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোগী পাঠান।

এই চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, জাতীয় মানসিক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. তারিক সুমন, কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের রেসিডেন্স সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ যোবায়ের মিয়াসহ আরও কয়েকজন মাইন্ড এইডে রোগী পাঠাতেন। তারাও প্রতি রোগীতে মোটা অঙ্কের কমিশন পেতেন। যে কারণে মাইন্ড এইডে রোগীর সংকট থাকত না।

এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, যেসব ডাক্তারের নাম আসছে তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ডা. মামুন যে মাইন্ড এইডের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়কে ফোন করে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইডে পাঠিয়েছেন এর কল রেকর্ড আমাদের হাতে আছে।

প্রসঙ্গত, পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন বরিশাল মহানগর পুলিশে (বিএমপি) সহকারি পুলিশ কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার (৯ নভেম্বর) তাকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের কর্মচারীদের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়। 

এ ঘটনায় গত ১০ নভেম্বর দায়ের করা মামলায় মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়। ওই দিনই ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে হাসপাতালটির আরও এক পরিচালক ফাতেমা খাতুন ময়না গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে করতে গিয়ে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়ে তাকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

হত্যাকাণ্ডের শিকার এএসপি আনিসুল করিম শিপন ২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগ থেকে এমএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ৩১তম বিসিএস-এ অসামান্য কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন তিনি। পুলিশ ক্যাডারে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। চাকরিকালীন তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত