মামুন ছিলেন না আনিসুলের চিকিৎসায়: মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২০, ১৮:১৪

সাহস ডেস্ক

বেসরকারি একটি হাসপাতালের কর্মীদের মারধরে নিহত জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমের চিকিৎসার কোনো পর্যায়ে চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে জানিয়েছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসার নামে আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, আনিসুল প্রথমে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে ডা. মামুনই তাকে বেসরকারি মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

এদিকে ডা. মামুনের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দুইদিন নিজেদের চেম্বারে রোগী না দেখার ঘোষণা দিয়েছেন মনোরোগ চিকিৎসকরা।

এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল জানিয়েছে, আনিসুল করিমের চিকিৎসায় ডা. মামুনের সংশ্লেষ না থাকার বিষয়টি তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে তারা।

হাসপাতালের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার স্বাক্ষরিত সংবাদ বজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “হাসপাতালের তদন্ত প্রতিবেদনে এটা প্রতীয়মাণ হয় যে উক্ত রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো পর্যায়েই ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।”

এতে আরও বলা হয়েছে, ৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশের জ্যেষ্ঠ এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে উত্তেজিত অবস্থায় তার ভগ্নিপতি ডা. রাশেদুল হাসান রিপন এবং পুলিশের কিছু সদস্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

“সে সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক রোগীর (আনিসুল করিম) ভগ্নিপতির সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে জরুরি ভিত্তিতে শান্ত করার জন্য উত্তেজনা উপশমকারী ইঞ্জেকশন দেন এবং তাকে পর্যবেক্ষণে রাখেন।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেদিন বেলা ৯টার দিকে রোগীর ভগ্নিপতি এবং উপস্থিত স্বজনরা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শাহানা পারভীনের সঙ্গে দেখা করেন। আর রোগীর ভগ্নিপতি ডা. শাহানা পারভীনের পূর্ব পরিচিত।

শাহানা পারভীন রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জরুরিভিত্তিতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু তার ভগ্নিপতিসহ অন্যান্য স্বজনরা তাকে ভর্তি করতে অসম্মত হন বলে দাবি করেছে হাসপাতাল।

এ বিষয়টি ডা. শাহানা পারভীন রোগীর আউটডোর টিকেটেও লিখে দিয়েছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

“ডা. শাহানা পারভীন আউটডোর টিকেটে প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দেন। রোগীর সঙ্গে আগত পুলিশ সদস্যদের সিসিতে আউট লিখে স্বাক্ষর দেন। তারপর রোগী আনিসুল করিম, তার বোন, ভগ্নিপতি এবং আগত পুলিশ সদস্যরা হাসপাতাল ছেড়ে যান।”

গত ৯ নভেম্বর ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়ে মারা যান এএসপি আনিসুল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আনিসুল উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কর্মচারীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।

তবে হাসপাতালের ‘অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে’ আনিসুলকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, আনিসুলকে ৬-৭ জন মাটিতে ফেলে চেপে ধরে আছেন, দুজন তকে কনুই দিয়ে আঘাত করছিলেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদও তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

আনিসুলের মৃত্যুর পর তার বাবা ফাইজ্জুদ্দিন আহমেদ মোট ১৫ জনকে আসামি করে আদাবর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামিকে পুলিশ আগেই গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের মধ্যে যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তাদের দেওয়া তথ্যেই পরে ডা. মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত