আদিতমারী ইউএনওকে হত্যার হুমকি উপজেলা চেয়ারম্যানের

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৩:২৬

সাহস ডেস্ক
আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস

আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়রি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের সরকারি নথিপত্র হারিয়ে যাওয়া এবং রাজস্ব তহবিলের ১৯টি চেক বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে আরও একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।

রবিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আদিতমারী থানায় পৃথক দুইটি ডায়রি নথিভুক্ত করা হয়। আদিতমারী থানায় ডায়রিটি করেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। কাজ না পেলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশ্রব্য ভাষায় গালাগালসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্ত বেষ্টনীর সুবিধাভোগির তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। বিধি বহির্ভূত ভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় এবং কাজ সমাপ্ত না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, তার কথামত কাজ না করায় একজন মহিলা কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানীর ঘটনা ঘটানোর হুমকী দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা খুলতে গেলে তার ছবি তুলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একই সাথে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন চেয়ারম্যান ফারুক।

আদিতমারী থানায় আরও একটি ডায়রি করেন উপজেলা পরিষদের মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান। ডায়রিতে বলা হয়, গত ১২ নভেম্বর অফিস শেষে বাড়িতে চলে যান তিনি। গত ১৫ নভেম্বর অফিসে এসে ভেতরের পকেট গেট খোলা দেখতে পেয়ে অফিসের চার সহকর্মীকে নিয়ে গচ্ছিত কাগজপত্র যাচাই করেন। এ সময় উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভার নথি, উপস্থিত হাজিরা, কর্মচারীদের হাজিরা খাতা এবং উপজেলা পরিষদের বেশ কিছু সরকারি নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

রবিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরো ৫ জন সহকারীর উপস্থিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস চেক বইটি দেখতে চেয়ে হাতে নেন। এ অবস্থায় উপজেলা রাজস্ব তহবিলের হিসাব নং-৩৩০০৪৯৬৪ সোনালী ব্যাংক লিমিটেড আদিতমারী শাখার ১৯টি চেক যা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন ব্যয় পরিশোধের নিমিত্তে যৌথ স্বাক্ষরিত ছিল সেগুলো তিনি তাদের উপস্থিতিতে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন।

আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, আমাকে ফাঁসাতেই নতুনভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সে কারণেই জিডি করা হয়েছে। চেকগুলোতে তার (চেয়ারম্যান) কোনো স্বাক্ষর ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউএনও মহোদয় নিরাপত্তা চেয়ে একটি ও চেক পাতা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় অপর একটি জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অপর দিকে ইউএনওসহ ১৭জন অফিসারের দায়ের করা অভিযোগটি তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। রবিবার (১৫ নভেম্বর) অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা লালমনিরহাটের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব রফিকুল ইসলাম দিনভর উপজেলা পরিষদ হলরুমে বিভিন্নজনের স্বাক্ষাকার গ্রহণ করেন।

ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। তাই আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছি। এছাড়াও আমার ও চেয়ারম্যানের যৌথ স্বাক্ষরীত ১৯টি চেক পাতা তিনি ছিঁড়ে ফেলেছেন। সেটা নিয়েও জিডি করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত