পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পাঁচজন গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২০, ০৩:৩৭

সাহস ডেস্ক

মসজিদের ভেতর ঢুকে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে আবু ইউসুফ শহিদুন্নবী জুয়েলকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে বুড়িমারী এলাকা থেকে তাদের আটক করে ভিডিও দেখে শনাক্ত করে শনিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাদের গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

পাটগ্রাম থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, ‘অন্যদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে এই পাঁচ জনের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে, তারা সকলে নামীয় আসামি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এরসঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

পুলিশ জানায়, নিহত আবু ইউসুফ শহিদুন্নবী জুয়েলের চাচাতো ভাই সাইফুল আলম বাদী হয়ে শতাধিক নামীয় ও শতশত অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশের ওপর আঘাত করে আহত করায় পুলিশের পক্ষে ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী বাদী হয়ে অর্ধ শতাধিক নামীয় ও শতশত অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে আরেকটি মামলা করেন।

নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।

ওসি সুমন কুমার মহন্ত বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোরআন অবমাননার অভিযোগের গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী বুড়িমারী বাজারে আবু ইউসুফ শহিদুন্নবী জুয়েল (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। জুয়েল ও তার বন্ধু আবু জোবায়ের সুলতান আব্বাস একটি মোটরসাইকেলে চড়ে বুড়িমারী এসেছিলেন ঘুরতে। বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের পাশে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় মসজিদে আসরের নামায আদায় করেন। নামাযের পর তিনি ওই মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদের বুকসেলফে রাখা কোরআন ও হাদিস পুস্তক দেখছিলেন। এসময় অসাবধানতা বসত একটি কোরআন বুকসেলফ থেকে পড়ে গেলে উপস্থিত খাদেম ও পাঁচ মুসল্লি চিৎকার শুরু করেন। পরবর্তীতে কোরবান অবমাননার অভিযোগের গুজব ছড়িয়ে পড়লে এ নির্মম ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, আমরা জুয়েলকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি। তার বন্ধুকে রক্ষা করতে পেরেছি। তাকে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রেখে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছি। কয়েক হাজার মানুষ ইট-পাথর ও লাঠি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভাংচুর করে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

এ ঘটনায় গতকাল থেকে জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত টিম মাঠে কাজ করছে। এ টিমের প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) টি এম এ মোমিন। অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসএসপি) রবিউল ইসলাম ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুন নাহার।

আগামীকাল রবিবার এ তদন্ত টিমকে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর। পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মহন্ত জানান, ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ শনাক্তে নিহত জুয়েলের দেহের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করে শুক্রবার বিকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত